E-Learning Info
Go to content
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
কক্সবাজারে সন্ধ্যা
চাকমার পাহাড়ি বস্তি, বুদ্ধমন্দিরের চূড়া ছুঁয়ে
ডাকহরকরা চাঁদ মেঘের পল্লীর ঘরে ঘরে
শুভেচ্ছা জানাতে যায়, কেঁদে ফেরে ঘণ্টার রোদন
চারদিকে। বাঁশের ঘরে ফালা ফালা দোচোয়ানি চাঁদ—
পূর্ণিমার বৌদ্ধ চাঁদ, চাকমার মুখশ্রীমাখা চাঁদ!
 
নতুন নির্মিত বাড়ি সমুদ্রের জলে ঝুঁকে আছে।
প্রতিষ্ঠাবেষ্টিত ঝাউ, কাজুবাদামের গাছ, বালু
গোটাদিন তেতেপুড়ে, শীতলে নিষ্ক্রান্ত হবে বলে
বাতাসের ভিক্ষাপ্রার্থী! জল সরে গেছে বহুদূর।
নীলাভ মসলিন নিয়ে বহুদূরে বঙ্গোপসাগর
আজ, এই সন্ধ্যাবেলা।
 
ব্ল্যাকডগ মধ্যিখানে নিয়ে দুই কবির কৈশোর
দু’টি রাঙা পদছাপ মেলানোর তদবিরে ব্যাকুল—
ব্যর্থ আলোচনা করে, গানের সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ে,
স্বর্ণাক্ষর বর্ণমালা নিয়ে লোফালুফি করে তীরে।
রূপচাদা জালে পড়ে, খোলামকুচির মতো খেদ
রঙিন কাঁকড়ার স্তূপ সংঘ ভেঙে ছড়ায় মাদুরে
একা একা। উপকূলে।
 
বুদ্ধপূর্ণিমার চাঁদ কক্সবাজারের কনে-দেখা
আলোয় বিভ্রান্ত আজ। অধিকন্তু, ভরসন্ধ্যেবেলা!
যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো?
ভাবছি; ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো।
এত কালো মেখেছি দু'হাতে
               এত কাল ধরে
কখনো তোমার করে, তোমাকে ভাবিনি।
এখন খাদের পাশে রাত্তিরে দাঁড়ালে
চাঁদ ডাকে : আয় আয় আয়
এখন গঙ্গার তীরে ঘুমন্ত দাঁড়ালে
চিতাকাঠ ডাকে : আয় আয়
যেতে পারি যে-কোন দিকেই আমি চলে যেতে পারি
কিন্তু, কেন যাবো?
সন্তানের মুখ ধরে একটি চুমো খাবো
যাবো
কিন্তু, এখনি যাবো না
তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে
যাবো একাকী যাবো না— অসময়ে।
মৃত্যুর পরেও যেন হেঁটে যেতে পারি
(শান্তিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতির প্রতি)
 
মানুষের মৃত্যু হলে মানুষের জন্য তার শোক
পড়ে থাকে কিছুদিন, ব্যবহৃত জিনিসেরা থাকে
জামা ও কাপড় থাকে, ছেঁড়া, জুতো তাও থেকে যায়
হয়তো বা পা-দুখানি রাঙা হলে পদচ্ছাপ থাকে
অনুপস্থিতি আর মরা পদচ্ছাপ রেখে ওরা
যাদের পিছনে ফেলে দিয়ে গেলে, তারা মনে করে
তোমার স্বভাবস্মৃতি তোমার ভালোর সীমাহীন
তোমার সমগ্র নিয়ে আলোচনা হয় না কখনো
হতেও পারে না বলে মনে হয়, হতে পারে নাকি?
মৃত্যুর দুদিন আগে তোমাকে কী সুন্দর দেখালো!
গল্প বলেছিলে বটে, আর কোনো কাজ বাকি নেই ঋণ নেই
কারো কাছে, পাওনা নিয়ে করিনি তদবির
আমি সুখী, তুমি জানো সুখ কাকে বলে?
সুখ সেই বিষণ্ণতা যে আমার কোলে বসে থাকে
অনন্যা একাকী কন্যা সেও তার নিজস্ব গৃহের
বারান্দায় বসে থাকে রাজার পুত্রের খেলাঘরে
তারো কাছে আমি এক বাতিল বাবার
স্মৃতি ছাড়া কিছু নয় অতীতের বিঘ্নও মধুর!
নিজেকে সরিয়ে নিতে আজ, পূর্ণ আছি বলে
জানিনা কখনো যদি পূর্ণতায় ইঁদুরের দাঁত
চাম কেটে বসে আর ফুটো করে বালিশ
তাহলে উজ্জ্বল তুলো বাতাস ভাসাবে
পঙ্গু অনর্থক দিন বৃথা চলে যাবে
দক্ষিণ দুয়ারে এসে দাঁড়াবে নির্ঘাৎ
চতুর্দোলা নিয়ে যম—
                  অপমান লাগে...
মৃত্যুর পরেও যেন হেঁটে যেতে পারি।।
তোমার হাত
তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতে
এই দেশে বসতি করে শান্তি শান্তি শান্তি
তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতে
সফলতার দীর্ঘ সিঁড়ি, তার নিচে ভুল-ভ্রান্তি
কিছুই জানতে পারিনি আজ, কাল যা কিছু আনতে
তার মাঝে কি থাকতো মিশে সেই আমাদের ক্লান্তির
দু-জন দু-হাত জড়িয়ে থাকা – সেই আমাদের শান্তি?
তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতে।
বেশ কিছুদিন সময় ছিলো – সুদুঃসময় ভাঙতে
গড়তে কিছু, গড়নপেটন – তার নামই তো কান্তি ?
এ সেই নিশ্চেতনের দেশের শুরু না সংক্রান্তি—
তোমার হাত যে ধরেইছিলাম তাই পারিনি জানতে।।
নীল ভালোবাসায়
আমি সোনার একটি মাছি খুন করেছি রাতদুপুরে
তাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম, আঁধার-সমুদ্রে নৌকা
যেমনভাবে বেঁচে ফিরতো— তাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম
আমি সোনার একটি মাছি খুন করেছি রাতদুপুরে।
হঠাৎ ছুরি দৌড়ে এলো – হাতের মুঠো জব্দ করে
আঁধারে চালাতে বললো, যেমনভাবে মারে বৈঠা
সুখে ওপার হেঁকে বলছে দুঃখমোচন করতে এসো
আমার পদ্মদীঘির কাছে শান-বাঁধানো ঘাটটি আছে
সেখানে কেউ কাপড় কাচে, দুঃখগ্লানি তুচ্ছ হলো—
নেশা আমার লাগলো চোখে, কে তুই মাছি দুঃখদায়ক
আমাকে বাঁধনে বেঁধে ফেলে রেখেছিস তোর কোটরে
হেঁটোয় কাঁটা—ওপরে কাঁটা, এই কি দীর্ঘ জীবনযাপন?
এই রোমাঞ্চকর যামিনী, হায় মাছি তুই সোনার বরণ!
খুন করেছি হঠাৎ আমি বাঁচবো বলে একা-একাই
দূর সমুদ্রে পাড়ি দেবোই, পাহাড়চুড়োয় থাকবো বসে
চিরটা কাল চলবো ছুটে – পিছনে নেই, পশ্চাতে নেই
তদন্তে ক্রূর পায়ের শব্দ, আমায় ওরা ছেড়ে দিয়েছে
ছেড়ে দিয়েছে বলেই আমি সোনার মাছি জড়িয়ে আছি
দীর্ঘতম জীবন এবার তোমার সঙ্গে ভোগ করেছি
এই রোমাঞ্চকর যামিনী- সোনায় কোনো গ্লানি লাগে না
খুন করে নীল ভালোবাসায় চমকপ্রদ জড়িয়ে গেলাম।

Website Developed by:

DR. BISHWAJIT BHATTACHARJEE
Assistant Prof. & Former Head
Dept. of Bengali, Karimganj College
Karimganj, Assam, India, 788710

+917002548380

bishwa941984@gmail.com
Important Links:
Back to content