শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (১৮৯২-১৯৬১)
জন্ম
শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলার সেনহাটি গ্রামে ২০জুলাই ১৮৯২ শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সত্যচরণ সেনগুপ্ত।
ব্যক্তিজীবন
পিতা সত্যচরণ সেনগুপ্ত রংপুরে কর্মরত ছিলন বলে তিনি সেখানেই স্কুলে ভর্তি হন। প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী চাকীর তিনি ছিলেন সহপাঠী। সমগ্র ভারতবর্ষ তখন স্বাধীনতা আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়েছিল। তিনিও তা থেকে দূরে থাকতে পারেন নি। ১৯০৫ সালে বিদ্যালয়ে শিক্ষা অর্ধসমাপ্ত রেখেই স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে কলকাতার জাতীয় বিদ্যালয় থেকে ১৯১১ খ্রীস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। কিছুদিন তিনি জাতীয় কলেজে অধ্যাপনা করেন এবং পরে সাংবাদিকতায় যোগ দেন।
সম্পাদক ছিলেন- সাপ্তাহিক হিতবাদী, বিজলী,আত্মশক্তি।
সহ-সম্পাদক ছিলেন- দৈনিক কৃষক ও ভারত
সাহিত্যজীবন
শচীন্দ্রনাথ নাটক রচনায় বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন। "সবার উপরে মানুষ সত্য '(১৯৫৬) নাটকটির কাহিনি অভিনব এবং এর চরিত্রগুলির আগমন ও কথাবার্তা চমকপ্রদ। মিশরের উপর ব্রিটেন ও ফ্রান্সের আক্রমণের সময় তখনকার মিশরের পরিবেশ অবলম্বনে নাটকটি রচিত। নায়ক সদানন্দ ও নায়িকা সুভদ্রা স্ফিনকসের সামনে দাঁড়িয়ে সুদূর অতীতে স্বপ্ন যাত্রা করলো। তখন ইতিহাসের কয়েকজন প্রসিদ্ধ নায়কের ছায়ামূর্তির সঙ্গে তাঁদের নানা বিষয়ে কথাবার্তা হল। অবশেষে ইতিহাসের নানা ভাঙাগড়া ও বর্তমান বিশ্বরাজনীতির নানা আলোচনার মধ্যে দিয়ে "সবার উপরে মানুষ সত্য' এই মানবনীতি নাটকের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হল। "আর্তনাদ ও জয়নাদ' (১৯৬১) নাটকের ভূমিকায় নাট্যকার লিখেছেন, "দুটি ঘটনা থেকে যে মানসিক বেদনা আমি পাই, তাই আমাকে এই রচনার প্রেরণা যোগায়। তার একটি হল কেন্দ্রীয় কর্মচারীদের ধর্মঘট ও তার পরিণতি এবং দ্বিতীয়টি হল অসমীয়াদের বাঙ্গালী খেদার উদ্দামতা' । মালিনী ও নলিনী এই দুই বোনের মধ্যে দিয়ে নাট্যঘটনা রূপায়িত হয়েছে। অবশ্য ধর্মঘট ও তার পরিণতি মালিনী চরিত্রের নাট্য রূপায়ণে তেমন কোনো সুদূর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি এবং দর্শকচিত্তে কোনো গভীর আবেগ জাগাতে পারে নি। নলিনীর চরিত্র আশ্রয় করেই নাটকের উংকন্ঠিত আবেগ ও মর্মভেদী বেদনা উৎসারিত হয়েছে। নলিনীর লাঞ্চনাকে অবলম্বন করেই নাট্যকার ঘনীভূত নাট্যরস সৃষ্টি করেছেন। ঐতিহাসিক ও সামাজিক নাটক রচনায় শচীন্দ্রনাথ যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
তাঁর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক নাটক
গৈরিক পতাকা (১৯৩০) দেশের দাবি (১৯৩৪) রাষ্ট্রবিপ্লব (১৯৪৬)
সিরাজদ্দৌলা (১৯৩৮) ধাত্রী পান্না (১৯৪৪) সবার উপরে মানুষ সত্য (১৯৫৭), আর্তনাদ ও জয়নাদ (১৯৬১)
তাঁর ঐতিহাসিক নাটক সিরাজদ্দৌলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তাঁর ঐতিহাসিক নাটকের ভাষা যেমন অলংকৃত, সামাজিক নাটকের সংলাপও তেমন বুদ্বিদীপ্ত।
সামাজিক নাটক
রক্তকমল (১৯২৯) ঝড়ের রাতে (১৯৩১) নার্সিংহোম (১৯৩৩)
স্বামী-স্ত্রী (১৯৩৭) তটিনীর বিচার (১৯৩৯) মাটির মায়া
কাঁটা ও কমল প্রলয় জননী
তিনি তাঁর নাটকে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের বিচিত্র জটিলতা ও সমস্যা তুলে ধরেছন। তাছাড়াও তিনি কিশোরদের জন্য নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহি্নি ও অনুবাদ গ্রন্থ রচনা করেছেন। শচীন্দ্রনাথের নাট্যকৃতিত্বের মধ্যে আমরা বিষয়বস্তুর নানা স্তর দেখতে পাই। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি ঐতিহাসিক ও সামাজিক নাটক রচনা করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের নবনাট্য আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং নানা আলোচনা উপদেশ, গঠনমূলক কাজ ও নাট্যকার ও নাট্য প্রযোজকদের মধ্যে সংঘশক্তি উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে নাট্য আন্দোলনকে পরিপুষ্ট করে তোলেন। শেষ জীবনে তাঁর চিন্তাশীল তাত্ত্বিক দিকটা বড় হয়ে ওঠার জন্য সরস সৃষ্টির ধারা খানিকটা রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। সমাজ ও রাজনীতির বহু অনাচার-অবিচার, বিপথগামীতা তিনি দেখেছিলেন। কিন্তু তাঁর সমাধানের পথ পান নি। সবরকম জটিলতা ও বিভিন্নতার মধ্যে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন প্রীতির পথ ও মৈত্রীর পথ।
দেশভ্রমণ
শচীন্দ্রনাথ বেসরকারি সাংস্কৃতিক দলের নেতা হিসেবে ছিলেন। তিনি রাশিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, চীন, সিংহল ইত্যাদি দেশেভ্রমণ করেন।
মৃত্যু
১৯৬১ সালের ৫ ই মার্চ শচীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন।
প্রবন্ধ: শতাব্দী নাথ
তথ্যসূত্র:
উইকিপিডিয়া
বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত, ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
(প্রকাশিত: ১১.০৫.২০২১)
There are no reviews yet.