শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮)
ভূমিকা:
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে পাঠক সমাজ যখন রবীন্দ্র-প্রতিভায় অর্থাৎ রবীন্দ্র গল্প উপন্যাসে আবেগপ্রবণ , রবি-কিরণে যখন বাংলা সাহিত্যের আকাশ জাজ্বল্যমান, সেই অবকাশে বাংলার সাহিত্যাকাশে শরৎ-শশীর আবির্ভাব। তখনকার পাঠক সমাজ অনুমান করতে পারেন নি,এই লেখকই কালে রবীন্দ্রনাথের জনপ্রিয়তাকে ম্লান করতে পারেন। এই শরৎ-শশীই বাংলা সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ছদ্মনাম অনিলা দেবী।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি বিভাগের হুগলী জেলার দেবানন্দ পুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ বংশে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতা ভুবনমোহিনী দেবী। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর- চব্বিশ পরগণা জেলার কাঁচড়া পাড়ার পার্শ্ববর্তী মামুদপুর নামক গ্রামে। শরৎচন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাড়া। তাঁর জন্মস্থান অর্থাৎ দেবানন্দ পুর ছিল প্রকৃতপক্ষে তাঁর পিতার মাতুলালয়। তাঁর মাতা ভুবনমোহিনী দেবী ছিলেন উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার হালিশহরের রামধন গঙ্গোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র কেদারনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা। পরবর্তী কালে তারা ভাগলপুর নিবাসী হন। দারিদ্রতায় গ্রাস করার ফলে পিতা মতিলাল স্বীয় স্ত্রী ভুবনমোহিনী দেবী ও সন্তানাদি সহিত ভাগলপুরে শ্বশুরগৃহেই বসবাস করতেন। পাঁচ ভাই ও বোনের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর দুই ভাই প্রভাসচন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র, দিদি অনিলা দেবী ছাড়াও সুশীলা দেবী নামে তাঁর এক বোন ছিল। তাঁর পিতা পরিবার নিয়ে ভাগলপুর শহরে থাকতেন বলে শৈশবের অধিকাংশ সময়ই শরৎচন্দ্রের মাতুলালয়ে কাটে।
শিক্ষা জীবন:
পাঁচ বছর বয়সে শরৎচন্দ্রকে তাঁর পিতা মতিলাল চট্টোপাধ্যায় দেবানন্দ পুরের প্যারী পন্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানে দু-তিন বছর অধ্যয়নের পর ভাগলপুর শহরে মাতুলালয়ে চলে আসেন। সেখানকার দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তিতে মামা তাঁকে ভর্তি করে দেন। তারপর ১৮৮৭ সালে ভাগলপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন কিন্তু ১৮৮৯ সালে তাঁর পিতার ডিহিরির চাকরি হারানোর ফলস্বরূপ পিতা মতিলাল স্বপরিবারে দেবানন্দপুরে ফিরে যান, কাজেই শরৎচন্দ্র ভাগলপুর জেলা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন এবং হুগলী ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু দারিদ্রতার জন্য ১৮৮২ সালে স্কুলের ফি জোগাড় করতে না পারায় সেই বিদ্যালয়ও ত্যাগ করতে হয়। এইসময় “কাশীরাম” ও ”ব্রহ্মদৈত্য” নামে দুটি গল্প লেখেন। শিক্ষার প্রতি শরৎচন্দ্রের অত্যধিক আসক্তি লক্ষ্য করে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক পাঁচকড়ি বন্দোপাধ্যায় তাঁকে তার বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন । ১৮৯৪ সালে এই বিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজে ভর্তি হন। সেই সময় কলেজে পড়াশোনার খরচ জোগাতে তাঁর মাতামহের, কনিষ্ঠ ভ্রাতা অঘোরনাথের দুই পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ও গিরীন্দ্রনাথকে প্রতিরাতে পড়াতেন। তাসত্ত্বেও এফ এ পরীক্ষার ফি জগাড় করতে না পারায় পরীক্ষায় বসতে পারেন নি।
ভাগ্যাণ্বেষণ:
উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে শরৎচন্দ্র ভাগলপুর শহরের আদমপুর ক্লাবের সদস্যবৃন্দের সাথে খেলাধূলা ও অভিনয় করে সময় কাটাতে লাগলেন। সেই সময় প্রতিবেশী বিভূতিভূষণ ভট্টের বাড়িতে একটি সাহিত্যসভার আয়োজন করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে ”দেবদাস”, “বড়দিদি”,”চন্দ্রনাথ”,”শুভদা” ইত্যাদি উপন্যাস এবং “অনুপমার প্রেম”,”আলো ও ছায়া”,”বোঝা”, “হরিচরণ” ইত্যাদি গল্প রচনা করেন। সেই সময় শরৎচন্দ্র বনেলী রাজ-এস্টেটে কিছুদিন চাকরি করেন। কিন্তু যে কোনো কারণে পিতার সঙ্গে সহমত না হওয়ায় অভিমানবশত গৃহ ছাড়া হন। পরবর্তীতে পিতার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তিনি ভাগলপুরে ফিরে আসেন এবং পিতার শ্রাদ্ধ্যশান্তি সম্পন্ন করে কলকাতায় চলে যান। সেখানে গিয়ে কলকাতার উচ্চ আদালতের উকিল লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে হিন্দি বইয়ে ইংরেজি তর্জমা করার জন্য মাসিক ত্রিশ টাকা মাইনেতে চাকরি পান। সেই সময়ে তিনি “মন্দির” নামে একটি গল্প লিখে “কুন্তলীন পুরস্কার” লাভ করেন।
লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে ছয় মাস চাকরি করার পর ১৯০৩ সালের জানুয়ারি মাসে রেঙ্গুনে শরৎচন্দ্র লালমোহন বাবুর ভগ্নিপতি উকিল অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে চলে যান। অঘোরনাথ তাঁকে বর্মা রেলওয়ের অডিট অফিসে একটি অস্থায়ী চাকরি জুটিয়ে দেন। তাঁর অস্থায়ী চাকরিটি দু-বছর পরই চলে যায়। তখন তিনি বন্ধু গিরীন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে পেগু চলে যান এবং সেখানে অবিনাশ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বসবাস করেন। ১৯০৬ সালে এপ্রিল মাসে বর্মার পাবলিক ওয়ার্কস অ্যাকাউন্টেস অফিসের ডেপুটি একজামিনার ফনীন্দ্রনাথ মিত্রের সহায়তায় শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে সেই অফিসে ৭৫ টাকা বেতনে কেরানির চাকরি পান এবং পরবর্তী দশ বছর সেই চাকরি করে যান
১৯১২ সালে অক্টোবর মাসে চাকরি থেকে একমাসের ছুটি নিয়ে স্বদেশে ফিরে এলে “যমুনা” নামক পত্রিকার সম্পাদক ফনীন্দ্রনাথ পাল- এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি শরৎচন্দ্রকে তার পত্রিকার জন্য লেখা পাঠাতে অনুরোধ করেন। কথানুযায়ী শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে গিয়ে “রামের সুমতি” গল্পটি পাঠিয়ে দেন, সেটি “যমুনা” পত্রিকায় ১৩১৯ বঙ্গাব্দের ফাগুন ও চৈত্রসংখ্যায় প্রকাশিত হয়। তারপর তিনি “ভারতবর্ষ” পত্রিকার জন্যও লেখা পাঠাতে থাকেন। সম্পাদক ফনীন্দ্রনাথ পাল শরৎচন্দ্রের লিখিত উপন্যাস “বড়দিদি” পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন। এমসি সরকার অ্যান্ড সন্স এবং গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স তাঁর লিখিত উপন্যাস গুলিকে পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন।
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছুটি নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে শরৎচন্দ্র চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন।
বৈবাহিক জীবন:
রেঙ্গুনে চাকুরিতে থাকাকালীন তিনি রেঙ্গুনের উপকন্ঠে বোটাটং পোজোনডং অঞ্চলে কলকারখানার মিস্ত্রিদের পল্লীতে বসবাস করতেন। সেই সময় তাঁর জীবনধারায় এক নাটকীয় মোড় নেয়। তিনি হঠাৎ অযাচিত ভাবে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য হন। লেখকের প্রথমা স্ত্রী শান্তিদেবীর পিতা এক মদ্যপের সাথে তার বিবাহ স্থির করলে শান্তিদেবী নিরুপায় হয়ে শরৎচন্দ্রকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে অনুরোধ করায় শরৎচন্দ্র বাধ্য হয়ে শান্তিদেবীকে বিবাহ করেন এবং বিবাহের কিছুদিন পর যথাসময়ে তাঁদের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রেঙ্গুনে প্লেগ মহামারি দেখা দেওয়ায় তাঁর স্ত্রী-পুত্র দুজনেই সেই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং লেখকের বৈবাহিক জীবনের প্রথম অধ্যায়ের যবনিকা পতন ঘটে। পরবর্তীতে শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে কৃষ্ণদাস অধিকারী নামে এক ব্যাক্তির অনুরোধে তার ১৪ বছরের কন্যা মোক্ষদাকে বিবাহ করেন এবং তাঁর নাম রাখেন হিরণ্ময়ী দেবী।
প্রকাশিত বই:
উপন্যাস
বড়দিদি (১৯১৩)
বিরাজবৌ (১৯১৪)
বিন্দুর ছেলে (১৯১৪)
পরিণীতা (১৯১৪)
পন্ডিত মশাই (১৯১৪)
মেজদিদি (১৯১৬)
চন্দ্রনাথ (১৯১৬)
বৈকুন্ঠের উইল (১৯১৬)
অরক্ষণীয়া (১৯১৬)
শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব (১৯১৭)
নিষ্কৃতি (১৯১৭)
দেবদাস (১৯১৭)
চরিত্রহীন (১৯১৭)
কাশীনাথ (১৯১৭)
দত্তা (১৯১৮)
স্বামী (১৯১৮)
শ্রীকান্ত –দ্বিতীয় পর্ব (১৯১৮)
ছবি (১৯১৮)
গৃহদাহ (১৯২০)
বামুনের মেয়ে (১৯২০)
দেনাপাওনা (১৯২৩)
নব-বিধান (১৯২৪)
পথের দাবী (১৯২৫)
শ্রীকান্ত-তৃতীয় পর্ব (১৯২৭)
শেষ প্রশ্ন (১৯৩১)
শ্রীকান্ত-চতুর্থ পর্ব (১৯৩৩)
বিপ্রদাস (১৯৩৫)
শুভদা (১৯৩৮)
শেষের পরিচয় (১৯৩৯)
নাটক
ষোড়শী (১৯২৮)
রমা (১৯২৮)
বিরাজ বউ (১৯৩৪)
বিজয়া (১৯৩৫)
গল্প
রামের সুমতি (১৯১৪)
পরিণীতা (১৯১৪)
বিন্দুর ছেলে (১৯১৪)
মেজদিদি (১৯১৫)
আঁধারে আলো ১৯১৫)
দর্পচূর্ণ (১৯১৫)
বৈকুন্ঠের উইল (১৯১৬)
অরক্ষণীয়া (১৯১৬)
নিষ্কৃতি (১৯১৭)
কাশীনাথ (১৯১৭)
স্বামী (১৯১৭)
একাদশী বৈরাগী
ছবি (১৯২০)
বিলাসী (১৯২০)
মামলার ফল (১৯২০)
হরিলক্ষ্মী (১৯২৬)
মহেশ (১৯২৬)
অভাগীর স্বর্গ (১৯২৬)
অনুরাধা (১৯৩৪)
সতী (১৯৩৪)
পরেশ (১৯৩৪)
প্রবন্ধ
নারীর মূল্যতরুণের বিদ্রোহ (১৯১৯)
স্বদেশ ও সাহিত্য (১৯৩২)
স্বরাজ সাধনায় নারী
শিক্ষার বিরোধ
স্মৃতিকথা
ভবিষ্যৎ বঙ্গসাহিত্য
গুরু শিষ্য সংবাদ
সাহিত্য ও নীতি
সাহিত্য আর্ট ও দুর্নীতি
ভারতীয় উচ্চ সঙ্গীত
চলচ্চিত্রায়ন
শরৎচন্দ্রের সাহিত্যকর্মকে ঘিরে ভারতীয় উপমহাদেশে এ পর্যন্ত নানান ভাষায় প্রায় পঞ্চাশটিরও অধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে দেবদাস উপন্যাসটি বাংলা, হিন্দি, তেলেগু ভাষায় আট বার তৈরি হয়। বিভিন্ন সময়ে “দেবদাস” বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রমথেশ বড়ুয়া, কানন দেবী, উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ কুমার, সুচিত্রা সেন, সুমিত্রা মূখার্জি, শাহরুখ খান, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত প্রমুখ। এছাড়া সন্ধ্যারানি ও উত্তমকুমার অভিনীত বিখ্যাত বাংলা ছবি বড়দিদি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও মৌসুমী চট্টয়োপাধ্যায় অভিনীত পরিণিতা ছবি নির্মিত হয়। “পরিণীতা” উপন্যাস দুবার চলচ্চিত্রায়িত হয়। বাংলা ছবি উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত চন্দ্রনাথ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত। উত্তমকুমার ও মাধবী মুখার্জি অভিনীত বিরাজ বৌ, ঋষিকেশ মুখার্জির হিন্দি ছবি মাঝলি দিদি অন্যতম। স্বামী (১৯৭৭) চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা লেখকের পুরস্কার পান। বিন্দুর ছেলে অবলম্বনে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে তুমহারি পাখি নামে ভারতীয় দূরদর্শনে ধারাবাহিক নির্মিত হয়।
শেষ জীবন:
শেষ বয়সে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় হাওড়া জেলার পানিত্রাস (সামড়াবেত) গ্রামেতে বসবাস করতেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দেউলটি স্টেসন থেকে তাঁর সামড়াবেতের বাড়িটি তিন-চার কিলোমিটার দূরে রূপনারায়ণ নদের তীরে এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত ছিল। বাড়ির সম্মুখে পাশাপাশি দুটি সান বাঁধানো পুষ্করিণী, তৎসঙ্গে ফলের বাগান যেমন ডালিম, পেয়ারা গাছে ঘেরা– দৃশ্যটি মনোমুগ্ধকর। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের দুর্ধর্ষ বন্যায় যখন নদের কূলবর্তী গ্রামের সমস্ত মাটির বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, কিন্তু আকর্ষিকভাবে শরৎচন্দ্রের মাটির বাড়িটি নদের কূলবর্তী স্থানে থেকেও বেঁচে যায়, জানালা পর্যন্ত ইট-সিমেন্টের গাঁথুনি থাকায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পড়ে যায় নি। পরে তাঁর বাড়িটি সরকারী উদ্যোগে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালে তিনি শিবপুরেও থাকতেন। শিবপুর ব্যাতাইলতলা বাজার থেকে চ্যাটার্জি হাঁট পর্যন্ত রাস্তাটি শরৎচন্দ্রের নামেই চালু আছে। শেষ বয়সে শরৎচন্দ্র প্রায়শই অসুস্থ থাকতেন। চিকিৎসক তাঁকে স্থান পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন, তাই চিকিৎসকের পরামর্শে তিন- চার মাস দেওঘরে থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন এবং আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাঁর যকৃতে কর্কট রোগ ধরা পড়ে, যা তাঁর সমস্ত পাকস্থলীতে ছড়িয়ে পড়ে। খ্যাতনামা চিকিৎসক বিধানচন্দ্র রায় এবং কুমুদশঙ্কর রায় প্রমুখ তাঁর অস্ত্রোপচার-এ মত দেন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার সাবার্বান হসপিটল রোডের একটি ইউরোপীয় নার্সিং হোমে ও পরে ৪নম্বর ভিক্টোরিয়া টেরাসে অবস্থিত পার্ক নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারী শল্য চিকিৎসক ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দেহে অস্ত্রোপচার করেন কিন্তু অস্ত্রোপচারেও সফলতা আসে নি। চার দিন পর ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জানুয়ারি সকাল দশ ঘটিকায় প্রথিত যশা লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনদীপ নির্বাপিত হয়।
প্রবন্ধ: তনুশ্রী চক্রবর্তী (প্রকাশিত: ০৯.০৫.২০২১)
তথ্যসূত্র: বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত, ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
There are no reviews yet.