E-Learning Info
Go to content
সাবিত্রী ব্রত
এককালে মদ্র  নামে এক রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যের রাজা অশ্বপতির কোনো সন্তান না হওয়ায় তিনি পত্নীর সাথে সাবিত্রী দেবীর আরাধনা শুরু করেন। দীর্ঘ চৌদ্দ বছর ব্রত উদযাপনের পর সাবিত্রী দেবী খুশি হয়ে তাঁদের সর্বসুলক্ষণাযুক্ত কন্যা হবে বলে আশীর্বাদ করেন। কালের নিয়মে রাণী মালবী এক সুন্দর কন্যা সন্তান প্রসব করেন এবং ভালোবেসে তাঁর নাম রাখেন সাবিত্রী। ক্রমে ক্রমে সাবিত্রী বড় হয়ে বিবাহযোগ্যা হয়ে ওঠেন। একদিন সাবিত্রী তাঁর সখীদের সাথে ঘুরতে ঘুরতে শাল্ব দেশের রাজ্যচ্যুত রাজা দ্যুমৎসেনের আশ্রমে এসে হাজির হন। সেখানে রাজার পুত্র সত্যবানকে দেখে সাবিত্রী মনে মনে তাঁকে বর হিসেবে গ্রহণ করে নেন।

ঠিক সেই সময় যখন মহামুনি নারদ অশ্বপতির সঙ্গে দেখা করতে আসেন, তখন রাজা নারদ মুনির সামনে তাঁর কন্যাকে জিজ্ঞেস করেন তাঁর কোনো পাত্র পছন্দ করা আছে কি না। উত্তরে সাবিত্রী সত্যবানের কথা জানান। অশ্বপতি তখন নারদ মুনিকে সত্যবানের কথা জিজ্ঞেস করায় নারদমুনি জানান তিনি রাজ্যছাড়া রাজা দ্যুমৎসেনের পুত্র এবং তাঁরা পতি পত্নী দুজনেই অন্ধ। তিনি এটিও জানান যে তাঁদের পুত্র সত্যবান বিয়ের একবছরের মাথায় মৃত্যুবরণ করবেন।

নারদ মুনির কথা শুনে অশ্বপতি এই বিবাহে সম্মতি না  দিলেও সত্যবতী সত্যবানকেই বিবাহ করবে বলে মনস্থির করেন। অগত্যা রাজা অশ্বপতি মেয়ের কথা রাখতে ভালো দিন দেখে তাঁদের বিয়ে দিয়ে দেয়। সত্যবানের আশ্রমে এসে সাবিত্রী অন্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা যত্ন করে এবং মন দিয়ে সংসার করতে থাকেন। কিন্তু নারদ মুনির ভবিষ্যত বাণী নিয়ে তাঁর মনে সংকোচ থেকে যায়। যখন বিয়ের এক বছর পূর্ণ হতে আর মাত্র তিনদিন বাকি তখন সাবিত্রী শ্বশুর-শাশুড়ির অনুমতি নিয়ে সত্যবানকে নিয়ে বনে যান এবং তিনদিন উপবাস থেকে ব্রত পালনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তারপর সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই সত্যবান ক্লান্তি ও মাথা ব্যথার কারণে অসুস্থ হয়ে  সাবিত্রীর কোলে ঘুমিয়ে পড়েন।

দেখতে দেখতে তাঁর দেহ থেকে  প্রাণ বেরিয়ে যায়। সেই দিন কৃষ্ণচতুর্দশী থাকায় ঘন অন্ধকারে তিনি স্বামীর মৃতদেহ নিয়ে মাতা সাবিত্রী দেবীর ব্রত করতে থাকেন। আর তাঁর দেহ থেকে একপ্রকার আলো বের হওয়ায় যমদূতেরা সত্যবানের প্রাণবায়ু না নিয়ে যমালয়ে গিয়ে ধর্মরাজকে জানায়, ধর্মরাজ তখন স্বয়ং এসে সত্যবানের প্রাণবায়ু নিয়ে চলে যেতে চাইলে দেখে সাবিত্রী ও তার পিছনে আসছেন। ধর্মরাজ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ধর্মরাজের স্তব করতে থাকেন। ধর্মরাজ তখন তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে তিনটি বর দিতে চান। সাবিত্রী তখন তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ির চোখের জ্যোতি, শ্বশুরের রাজ্য আর তাঁর বাবার একশত পুত্র হবার বর চান।

ধর্মরাজ তখন খুশি মনে তাঁকে তথাস্তু বলে বর দিয়ে আবার চলতে শুরু করেন, তখন তিনি দেখতে পান সাবিত্রী তার পিছনে আসছেন, কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি আবার ধর্মরাজের স্তব করায় ধর্মরাজ খুশি হয়ে তাঁকে বর দিতে চান। সাবিত্রী তখন সত্যবানের ঔরসে শত পুত্রের মা হওয়ার বর চান।ধর্মরাজ তথাস্তু বলে চলে যেতে চাইলে সাবিত্রী আবার তার পিছনে যেতে শুরু করেন। ধর্মরাজ তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন,  কি ব্যাপার! উত্তরে সাবিত্রী বললেন, "আপনি যে আমাকে সত্যবানের ঔরসে পুত্র হবার আশীর্বাদ করলেন, তাহলে আপনার ধর্ম রক্ষা পাবে কি করে? সুতরাং আপনি সত্যবানের প্রাণ বায়ু ফিরিয়ে দিন আর আপনার ধর্ম রক্ষা করুন।' সাবিত্রীর কথা শুনে ধর্মরাজ লজ্জিত হয়ে সত্যবান-এর প্রাণবায়ু ফিরিয়ে দেন।

তৎপর সত্যবান জেগে ওঠে। এদিকে রাজা দ্যুমৎসেন এবং তাঁর স্ত্রী চোখের দৃষ্টি ফিরে পান, তাঁর মন্ত্রী এসেও খবর দেয় তাদের শত্রু বিনাশ হয়েছে। রাজাও নিজের রাজ্য ফিরে পায়। এভাবে সাবিত্রী এই ব্রতের মাধ্যমে তাঁর সবকিছু ফিরে পান। তারপর থেকে এই ব্রতের কথা সমগ্র দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত বৈশাখ মাসের সংক্রান্তির দিন কি়ংবা জ্যৈষ্ঠ মাসে সাবিত্রী চতুর্দশী ব্রত পালন করা হয়। সেই দিন সাবিত্রী, সত্যবান ও একেই সঙ্গে ধর্মরাজের পূজা করা হয়। বিশেষত সধবা মহিলারা এই ব্রত পালন করে থাকেন। সাবিত্রীর মতো তারাও যেন অক্ষয় সিঁথি লাভ করে, সেই কামনাকে সামনে রেখেই ব্রত পাঠ হয়, চলে দিনভর পূজো।

নিবন্ধ: ঈশিতা চৌধুরী
(প্রকাশিত: ১২.০৭.২০২১)
There are no reviews yet.
0
0
0
0
0

Website Developed by:

DR. BISHWAJIT BHATTACHARJEE
Assistant Prof. & Former Head
Dept. of Bengali, Karimganj College
Karimganj, Assam, India, 788710

+917002548380

bishwa941984@gmail.com
Important Links:
Back to content