E-Learning Info
Go to content
জেন হেলেন রোলান্ডস (Miss J. H. Rowlands): করিমগঞ্জ কলেজ এবং করিমগঞ্জ এর ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব
বাঙালি না হয়ে বাঙালিদের জন্য যে মনে প্রাণে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন তিনি হলেন একজন আইরিশ মহিলা জেন হেলেন রোলান্ডস (Miss J. H. Rowlands)। তিনি ছিলেন একজন খ্রিস্টান মিশনারি। ভারতবর্ষকে ভালোবেসে সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে শিলচরের মিশনারী চার্চে এসেছিলেন ১৯৩২ সালে। আপোষহীন ও একজন ব্যক্তিত্বশালীনি মহিলা ছিলেন বলে খুব কম সময়ের মধ্যেই তিনি তখন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ঔপনিবেশিক শাসনযন্ত্রের যাঁতাকলে আমরা একসময় যেমন পিষ্ট ছিলাম, ঠিক সে সময় এমন কিছু ব্যক্তিত্ব ভারতে এসেছিলেন যারা আমৃত্যু ভারতের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। ধর্ম প্রচারক হলেও রোলান্ডস এই পিছিয়ে থাকা তৎকালীন সুরমা উপত্যকায় নারী শিক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি যেমন ছিলেন মানবতাবাদী তেমনি ছিলেন শিক্ষা প্রচারক। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে ভারতে চলে আসা এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি এবং বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় স্নাতকোত্তরে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৩০ সালে পেরিস থেকে তিনি ডি.লিট করেন। তাঁর দিনপঞ্জি থেকে জানা যায় তিনি “Position of Bengali Literature from the earliest times up to 1850 A. D” এই বিষয়ের উপর গবেষণা করেছিলেন। ১৮৯১ সালে ওয়ালের মেনাই ব্রিজ নামে একটি ছোট শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে নিউ টাউন কান্ট্রি স্কুলে তিনি ফ্রেঞ্চ (French) ও বিউমারিস (Beaumaris) ভাষা পড়াতেন। ১৯১৫ সালে তিনি খ্রিস্টান মিশনারিতে দীক্ষিত হন। ১৯১৬ সালে তিনি সিলেটের মৌলভি বাজারে চলে আসেন এবং মেয়েদের একটি স্কুলে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হন। সে সময়ই তিনি খুব ভালো করে বাংলা শেখেন। ১৯২৭ সালে তিনি মৌলভি বাজার ছেড়ে দার্জিলিং ভাষা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। দার্জিলিং থেকে কলকাতা খুব কাছে হওয়ায় তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর পড়াশুনা করেন। সেখান থেকে শিলচরে আসার পরে তাঁর শেষ জীবন করিমগঞ্জে অতিবাহিত হয় এবং ১৯৫৫ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯৪৬ সালের ৮ মার্চ তৎকালীন সিলেট ডিভিসনের এস. ডি. ও একটি পত্রে তাঁর প্রশংসা করে সিলেটে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি করিমগঞ্জ চলে আসেন। করিমগঞ্জে এসেই বিভিন্ন জনহিতকর কাজে তিনি জড়িয়ে পরেন। করিমগঞ্জ ছিল তাঁর দ্বিতীয় বাসস্থান। আমৃত্যু করিমগঞ্জবাসীর জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। সে সময় পর্বে নারীশিক্ষা কিংবা নারীস্বাধীনতার তেমন চল ছিল না। তিনি এগিয়ে আসেন করিমগঞ্জে স্ত্রী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে। তাঁর সবচেয়ে মহৎ কাজ করিমগঞ্জে ‘দীপ্তি নিবাস’ নামে একটি অনাথাশ্রম স্থাপন করা। যাদের কেউ ছিল না তাদের তিনি মায়ের মত সবার সেবা করতেন।
সামাজিক আন্দোলনের সাথে সাথে তিনি শিক্ষাক্ষত্রেও শক্ত হাতে হাল ধরেছিলেন। করিমগঞ্জ কলেজের ঊষালগ্নে তিনি যদি না থাকতেন তাহলে হয়তো কলেজের কর্মকাণ্ড অনেকটাই পিছিয়ে পড়ত। কারণ সে সময় যোগ্য শিক্ষকের খুবই অভাব ছিল। করিমগঞ্জ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রমেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যকে সে সময় কলকাতা গিয়ে শিক্ষক নিয়ে আসতে হয়েছিল। বাংলার প্রতি তাঁর এতোটাই ভালোবাসা ছিল যে তিনি অনর্গল বাংলা পড়াতে পারতেন। বিদেশি হয়ে বাংলা ভাষা এবং অন্য দেশের কোনো একটি মফস্বলকে ভালোবেসে নিজের জীবন উৎসর্গ করা সত্যিই বিরল। যেহেতু তিনি মিশনারি ছিলেন তাই করিমগঞ্জ কলেজে কোনো সাম্মানিক ছাড়াই তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি মূলত ইংরেজি, আর দর্শনের ক্লাস করাতেন। কিন্তু অনেক সময় বাংলার ক্লাসও নিতেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ আদিত্য স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন, “After we started the Karimganj College in 1946, Dr. Rowlands was requested to take some classes as honorary professor. She did not miss a single class in any week till her death on 11.02.55 except when she went out of India.” তাঁর কাছে তখন অনেক ইংরেজি বইয়ের সাথে সাথে বাংলা বইয়েরও সম্ভার ছিল। কলেজের গ্রন্থাগারের অভাব পূরণের জন্য রবীন্দ্র রচনাবলী, শেক্সপীয়র রচনাবলীসহ তখন অনেক বই দান করেছিলেন। ইউরোপীয়ান মিশনারিদের বাংলা শেখানোর জন্য তিনি “Learning Bengali Language from English”  নামে একটি বইও লিখেছিলেন। তাঁর অবদানকে সম্মান জানিয়ে করিমগঞ্জ কলেজের বর্তমান লাইব্রেরি হল Rowlands Library Hall রাখা হয়েছে। ১৯৫৮ সালে এই লাইব্রেরি হলের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল সৈয়দ ফজল আলি। ১৯৮৬ সালে করিমগঞ্জে তাঁর স্মৃতিতে Rowlands Memorial High School প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্কুল মিজোরাম প্রেসবিটেরিয়ান চার্চ এর অধীনে। ২০০৭ সালে আসাম সরকার ছাত্রী নিবাস তৈরি করার জন্য অর্থ প্রদান করলে তৎকালীন কলেজ অধ্যক্ষ ড. রাধিকারঞ্জন চক্রবর্তীর সময়ে একটি ছাত্রীনিবাস নির্মিত হয়। যেহেতু স্ত্রীশিক্ষায় এই অঞ্চলে তাঁর অবদান অসামান্য তাই সে সময়ের হোস্টেল সুপারের দায়িত্বে থাকা ড. নির্মল কুমার সরকার ছাত্রীবাসের নাম Rowlands Memorial Girls Hostel রাখার প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে রোলান্ডস এর প্রতি সম্মান জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এই নামই গ্রহণ করেন। তিনিই সম্ভবত করিমগঞ্জে আসা শেষ ইউরোপীয়ান মিশনারী। তিনি করিমগঞ্জ কলেজ এবং করিমগঞ্জবাসীদের জন্য যা করে গেছেন তাঁর জন্য তিনি আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তথ্যসূত্র:
1. From the Corridors of Memory, 1970, Rabindranath Aditya
2. Portrait of A Visionary: J. H. Rowlands, Sujit Kumar Ghosh
3. অশোকবিজয় রাহা এবং করিমগঞ্জ কলেজের বাংলা বিদ্যাচর্চা, ড. জন্মজিৎ রায়
4. করিমগঞ্জ কলেজে আমার অধ্যয়নকালীন কিছু স্মৃতি, রমা দাস
5. https://en.wikipedia.org/wiki/Jane_Helen_Rowlands
(c) Dr. Bishwajit Bhattacharjee, Asst. Professor, Karimganj College, Karimganj
Date: 30.04.2020
Share

Website Developed by:

DR. BISHWAJIT BHATTACHARJEE
Assistant Prof. & Former Head
Dept. of Bengali, Karimganj College
Karimganj, Assam, India, 788710

+917002548380

bishwa941984@gmail.com
Important Links:
Back to content