সমাসে শব্দ বন্ধন ও হাইফেন-প্রয়োগ
বাংলা বানানের পরিপূরক সংশ্লিষ্ট, সমাস বদ্ধ তথা যৌগিক শব্দ বিন্যাসের পদ্ধতি নিয়েও বিশৃঙ্খলা-নিবারণের ও একরূপতা-আনয়নের কারণে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। কোন শব্দ গুচ্ছ একসঙ্গে লেখা হবে, কোন গুলিকে পৃথক রাখা হবে বা হাইফেন দিয়ে যুক্ত করা হবে, সে সম্বন্ধে ও সংশয়-নিবারক ও সর্বজন গ্রাহ্য কতকগুলি সাধারণ নিয়ম পরবর্তী সূত্রগুলিতে দ্রষ্টব্য।
- যে সব ক্রিয়া সূচক বা ক্রিয়া জাত বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একাধিক অংশে বিভক্ত এবং সাধারণ ভাবে দুটি ক্রিয়া যুক্ত বাক্যাংশ সমাস (Syntactical compound) বলে মনে হয়, সেগুলিতে হাইফেন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সুতরাং সেটি অনুসরণ বাঞ্ছনীয়।
খসে-পড়া (মালা হতে খসে পড়া ফুলের একটি দল)
চোখে- চাওয়া (চোখে চাওয়ার সকল বাঁধন)
ভুলে যাওয়া (ভুলে-যাওয়ার বোঝাই ভরি)
- দুই বা দুই এর বেশি শব্দ নিয়ে তৈরি অনুরূপ বাক্যাংশমূলক সমাসবদ্ধ বিশেষণ জাতীয় শব্দের ক্ষেত্রেও হাইফেন ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। যেমন- নাম-না-জানা, সদ্য-ভরতি হওয়া, না-বলা, না-দেখা, কত-না ইত্যাদি।
- সংস্কৃত সূত্রে সন্ধি করা হয় না, এমন সমাস বদ্ধ পদে হাইফেন দেওয়াই সংগত। যেমন: ঘন-আড়ম্বর, প্রয়োজন-উদ্ভূত, বিদ্যুৎ-আলোক, বেলা-অবেলা, ভবিষ্যৎ-ভাবনা, স্বেচ্ছা-অবসর ইত্যাদি।
- সংস্কৃত "ছন্দস' এর কর্তৃকারক এক বচনের রূপ "ছন্দঃ' হলেও বাংলায় তার অর্ধ তৎসম রূপ "ছন্দ'-ই মূল শব্দ হিসেবে দীর্ঘদিন প্রচলিত। তাই আধুনিক প্রয়োগে সমাসের পূর্বপদ হিসাবে "ছন্দ' লেখা বিধি সম্মত।
- নুতন সমাস বদ্ধ বা যৌগিক শব্দের ক্ষেত্রে বিশেষত আধুনিক কালে ব্যবহার্য কোন বিষয় নির্দেশে অর্থ বোধের সুবিধার জন্য সমস্যমান বা যোজ্যমান শব্দগুলির মধ্যে ফাঁক না রেখে হাইফেন দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। যেমন: ই-মেল, উপগ্রহ-মাধ্যম-সংযোগ-ব্যবস্থা, এক-জানালা-বন্দোবস্ত, দূরদর্শন-উপস্থাপনা, টেলি-যোগাযোগ ইত্যাদি। তবে দূরভাষ, চলভাষও মান্য। আদ্যবর্ণ মাত্রিক (acrostic) শব্দের ক্ষেত্রে হাইফেন বা ফুলস্টপ বা ফাঁক বর্জনীয়। যেমন: এসটিডি, টিভি, বিবিসি, ভাজপা,লসাগু ইত্যাদি।
- দুই এর বেশি শব্দের দ্বন্দ্ব সমাসের ক্ষেত্রে সংযোগ চিহ্ন অর্থবোধে সহায়তা করে। যেমন: আজ-কাল-পরশু, তেল-নুন-লকড়ি, বাপ-মা-ভাই-বোন, রাম-শ্যাম-যদু, রূপ-রস-শব্দ-গন্ধ-স্পর্শ, হাত-পা-নাক-কান।
- সমার্থক বা সমপর্যায়ের দুটি শব্দের সমাস হলে তা জুড়ে লেখা ই সংগত। যেমন: কাগজপত্তর, ঘরবাড়ি, টাকাপয়সা, বন্ধুবান্ধব, রাজাবাদশা। প্রতি ধ্বন্যাত্মক যুগ্ম শব্দও হাইফেনহীন হয় (জলটল), কচ্চিৎ হাইফেন যুক্ত হয়। যেমনত: চা-টা।
- তবে এ ক্ষেত্রে পরবর্তী শব্দটির গোড়ায় স্বরবর্ণ থাকলে হাইফেন দেওয়া বাঞ্ছনীয়। যেমন: আশা-আকাঙ্খা, আমির-ওমরা, জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়, বিষয়-আশয়, ভাদ্র-আশ্বিন, রাজা-উজির ইত্যাদি।