E-Learning Info
Go to content

কীর্তন

কীর্তিকীর্তন  এই উভয় শব্দই কৃৎ ধাতু থেকে উৎপন্ন। কৃৎ ধাতুর অর্থ হল প্রশংসা। কীর্তন শব্দের অর্থ হলো গুণ বর্ণনা (মহিমা কীর্তন)। সাধারণ মানুষের অতি সহজে ঈশ্বর সাধনার উপায় হিসেবে মূলত কীর্তনের উদ্ভব। এতে ভগবানের নামাবলী, গুণ ও লীলা বর্ণিত হয়। এদেশে গানের মাধ্যমে ধর্ম চর্চা প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে, এমনকি দশম একাদশ শতকে চর্যাগীতিতে সমবেত গান গাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল এমন তথ্য পাওয়া যায়। সংস্কৃত পণ্ডিত জয়দেবের গীতগোবিন্দ হল কীর্তন গানের প্রকৃত উৎস। দীন চণ্ডীদাস, শ্রীজয়দেব, বডুচণ্ডীদাস, দ্বিজ চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি প্রভৃতি প্রচুর কীর্তন গান রচনা করেছিলেন। অধিকাংশ পদই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে। মধ্যযুগে চৈতন্যদেবকে কেন্দ্র করে কীর্তনের একটি নতুন ধারা তৈরি হয়। তিনি সংকীর্তনের জনক রূপে পরিচিত। তাঁর মৃত্যুর পর কীর্তন নানাভাবে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হতে থাকে। সে সময় থেকেই কীর্তন প্রকৃত অর্থে লীলাকীর্তনের রূপ নেয়। "চৈতন্যচরিতামৃতে' পাওয়া যায়-
"চৈতন্য সেব চৈতন্য গাও লও চৈতন্য নাম।
চৈতন্যে যে ভক্তি করে সে মোর প্রাণ।।

কীর্তনের প্রভাব বাউলগানেও পরিলক্ষিত হয়। বহু কীর্তন ভেঙ্গে বহু লোকসঙ্গীত তৈরি হয়েছে। একসময় গ্রাম বাংলায় ভোরবেলা কীর্তন গান মানুষ গেয়ে গেয়ে বেড়াত। এ প্রসঙ্গে আমরা উল্লেখ করতে পারি, নিম্নলিখিত গানের কথা-
"ভজ গৌরাঙ্গ কহ গৌরাঙ্গ
               লহ গৌরাঙ্গের নাম রে।
যে জন ভজে গৌরাঙ্গ নাম
                সে হয় আমার প্রাণরে।'
ভারতে বিভিন্ন প্রান্তে কীর্তনের প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়। তার মধ্যে কীর্তনের প্রচলন সর্বাধিক "পুরিধাম' ও "বাংলায়' পাওয়া যায়। প্রাচীন এ ভারতে কিছু বিখ্যাত কীর্তনীয়াদের নাম পাওয়া যায় যার মধ্যে- শ্রীঅদ্বৈতাচার্য, ব্রহ্ম হরিদাস, শ্রী মহাপ্রভু, শ্রীবাস পণ্ডিতই বিখ্যাত।

বাংলায় ঢপকীর্তন নামে কীর্তনের আরেকটি ধারা পাওয়া যায়। মুর্শিদাবাদ জেলার রূপচাঁদ অধিকারী এই কীর্তনের সৃষ্টি করেছিলেন। যশোহরের মধুসূদন কান ঢপকীর্তন এর বিখ্যাত গায়ক ছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গে কালীকীর্তন নামে আরেক ধরনের কীর্তন গাওয়া হয়। এটি শাক্ত পদাবলীর মূলত গীতি রূপ। এই ধারার কবি ও গায়করা হলেন- দ্বিজ রামপ্রসাদ, কমলাকান্ত, নীলকন্ঠ প্রমুখ।
কীর্তন এ পালাগানের পর "ঝুমুর গান' গাওয়া হয় অবশেষে কীর্তন সমাপ্তিতে শেষে "মিলন গান' গাওয়া হয়।
কীর্তন এর জনপ্রিয়তা এক সময় এতটা ছিল যে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে কীর্তন গান শুনতেন। কাজী নজরুল ইসলাম বেশ কিছু কীর্তন গান রচনা করেছিলেন। বর্তমানে আধুনিক শহুরে জীবনের সাথে তাল মিলাতে কীর্তন এর প্রচলন অনেকটা কমে এলেও গ্রামে এবং শহরে কীর্তনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। আজকাল আধুনিক গানেও অনেক সময় কীর্তনের মৌলিক সুর ও ভাবসংযোজনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় ।

পুরিধামে কিছু বিখ্যাত কীর্তনীয়াগণ হলেন: দামোদর পণ্ডিত, শ্রী গোবিন্দ ঘোষ, বল্লভ সেন, ছোট হরিদাস প্রভৃতি বিখ্যাত।
বাংলায় কিছু বিখ্যাত কীর্তনীয়া হলেন: ময়নাডাল, শ্রীনিবাস আচার্য, নরোত্তম দাস ঠাকুর, শ্রী শ্যামানন্দ, রসিক দাস, গণেশ দাস, নন্দকিশোর দাস, কৃষ্ণচন্দ্র দে, রাধারাণী, ব্রজেন সেন প্রমুখ।
কীর্তন এর প্রকার
কীর্তন দুই প্রকার
১. নামকীর্তন- নামকীর্তনে শ্রীহরির নাম ও করুণার কথাই সম্পূর্ণ রূপে উল্লেখযোগ্য।
২. লীলাকীর্তন- লীলাকীর্তনে শ্রীহরির রূপ, গুণ ও বিবিধ মনোহারি লীলা পর্যায় রূপে গাওয়া হয়।
কীর্তন এর ধারা
প্রধান তিনটি: ১. কান্দরা ২. ময়নাতাল  ৩. শ্রীখন্ড মনোহর সাহী।
কীর্তন এর মোট পাঁচটি অঙ্গ
১.কথা ২. দো‌ঁহা ৩. আখর ৪. তুক ৫. ছুট
কীর্তন গানে ব্যাবহৃত বাদ্যযন্ত্র হল:
মৃদঙ্গ, শ্রীখোল, হারমোনিয়াম ও করতাল।
প্রবন্ধ: সুপ্রিতা নাথ
তথ্যসূত্র:
১.বঙ্গীয় লোক সংস্কৃতি কোষ, বরুণ কুমার চক্রবর্তী
২. বাংলাপিডিয়া
(প্রকাশিত: ০২.০৬.২০২১)
There are no reviews yet.
0
0
0
0
0

Website Developed by:

DR. BISHWAJIT BHATTACHARJEE
Assistant Prof. & Former Head
Dept. of Bengali, Karimganj College
Karimganj, Assam, India, 788710

+917002548380

bishwa941984@gmail.com
Important Links:
Back to content