কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)
কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর এক অন্যতম দ্রোহ ও প্রেমের কবি।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন
১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে (জ্যৈষ্ঠ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্ৰামের এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা-কাজী ফকির আহমদ ছিলেন একজন মসজিদের প্রধান ও মাজারের খাদেম। মাতা-জাহেদা খাতুন। স্ত্রী- নার্গিস আসার খানম যার নামের অর্থ গুল্ম, আশালতা সেনগুপ্ত (প্রমিলা)। পিতামহ -কাজী আমিন উল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুলের চার ছেলে ছিল প্রথম ছেলে কৃষ্ণ মুহম্মদ যে অনেক অল্প বয়সেই মারা যায়। এতে নজরুল অনেক কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু এই কষ্টের শেষ হয় তাঁর দ্বিতীয় ছেলে অরিন্দম বুলবুলের মুখ দেখে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেও মাত্র চার বছর বয়সে বসন্ত রোগে মারা যায়। তারপর আরো দুই ছেলের জন্ম হয়, কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ। তিনি তাদের ভালোবেসে নাম দেন কাজী সব্যসাচীকে সানি ও কাজী অনিরুদ্ধকে নিনি। নজরুলের ডাক নাম ছিল- দুখু মিয়া। নজরুল তাঁর তিন ভাই বোনদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর এক অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক। বাংলা সাহিত্যের এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয় নজরুলের হাত ধরে। তাঁর কবিতা ও গান এক সময় অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে অন্যায়, অবিচারের প্রতি বিদ্রোহ। যেখানে অন্যায় দেখেছেন সেখানেই তিনি প্রতিবাদ করেছেন। তাঁর "বিদ্রোহী' কবিতার প্রকাশের পর মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এই কবিতা এতোটাই জনপ্রিয়তা লাভ করে তিনি কবিতার নামানুসারে "বিদ্রোহী' কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর লেখালেখির মূল উৎস ছিল মানুষের উপর অত্যাচার, অবিচার। যার জন্য তাকে অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছিল, কিন্তু তিনি হাল ছাড়েন নি।
একসময় তিনি গ্ৰামের স্থানীয় মসজিদের প্রধানের কাজ করেন, সেখানে তিনি কুরাণ, ইসলাম, ধর্ম, দর্শন প্রভৃতি অধ্যয়ন করেন। ১৯০৮সালে যখন তাঁর পিতার মৃত্যু হয়, তখন তাঁর বয়স নয় বৎসর। পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব অনটনের জন্য তাঁর শিক্ষাজীবনে বাঁধা পড়ে, তাঁর যখন দশ বৎসর বয়স তখনই তাঁকে জীবিকা অর্জনের জন্য মাঠে নামতে হয়। এসব কিছুর মধ্যেও নজরুল মক্তব থেকে নিম্নমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর একই সাথে হাজী পালোয়ান নামক কবরের সেবক ও মসজিদের মুয়াযজিন অর্থাৎ আজান দাতা হিসেবেও কাজ করেন। যার জন্য অতি অল্প বয়সেই তিনি ইসলাম ধর্মের নানা রীতি-নিয়ম নিয়ম সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করেন, যা পরবর্তীকালে তাঁর সাহিত্য জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তিনি তাঁর চাচা কাজী বজলে করিমের নেতৃত্বে লেটো দলে যোগ দেন এবং প্রচুর লেটো গান রচনা করেন। এভাবেই তিনি নিজ অভিজ্ঞতা ও কর্মের আলোতে বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যে অধ্যয়ন শুরু করেন। শুধু তাই নয় অনেক অল্প বয়সেই তিনি নাট্যদলের জন্য বিভিন্ন লোকসঙ্গীতও রচনা করেন।
মুক্তমনের নজরুল ইসলাম ধর্মের সাথে সাথে হিন্দু ধর্ম নিয়েও চর্চা করেন। তিনি অনেকগুলি জনপ্রিয় শ্যামাসঙ্গীতের রচয়িতা। ১৯১০ সালে লেটো দলের সঙ্গ ত্যাগ করে রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন, সেখানে পড়াশোনা শেষে ভর্তি হন মাথরুন নামে এক উচ্চ ইংরেজি স্কুলে। সেখানের প্রধান শিক্ষক ছিলেন কুমুদরজ্ঞন মল্লিক পরবর্তীকালে এই স্কুল নবীন চন্দ্র ইনস্টিটিউশন নামে পরিচিতি লাভ করে। তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক প্রভৃতি লিখলেও মূলত কবি হিসেবেই তাঁর পরিচিতি।
সৈনিক জীবন
নজরুল যে একদিন হাতে অস্ত্র তুলে নেবেন এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন তা সত্যিই অকল্পনীয়। তাঁর জীবনের প্রথমদিকের বেশিরভাগ অংশই কেটেছে সেনাবাহিনীতে। তাঁর যখন আঠারো বৎসর অর্থাৎ ১৯১৭ সালের শেষদিকে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর সৈনিক জীবনের শুরুতে প্রশিক্ষণের জন্য কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে যান সেখান থেকে পরবর্তীকালে সীমান্ত প্রদেশে যান। প্রশিক্ষণ শেষে পুনরায় তাঁকে সেনানিবাসের জীবন কাটাতে হয়। সেনাবাহিনীতে তিনি ছিলেন ১৯১৭ সালের শেষের দিক থেকে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের প্রায় মার্চ-এপ্রিল পযর্ন্ত, মোটামুটি প্রায় আড়াই বৎসর। তাছাড়াও সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন কোন কোন সময় তিনি সঙ্গী সৈনিকদের সঙ্গে গান, সাহিত্য চর্চা ইত্যাদি করতেন। তাছাড়াও অনেক সময় রচনা লিখতেন। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল "বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী', "মুক্তি', "ব্যথার দান', "ঘুমের ঘোরে' প্রভৃতি। তিনি একসময় ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের একজন সাধারণ সৈনিক থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছেন। নজরুল সেনাবাহিনীতে থাকলেও একই সাথে কলকাতায় থাকাকালীন তিনি বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এইগুলির মধ্যে আছে "প্রবাসী', "মানসী', "মর্ম্মবাণী', "সবুজপত্র', "সওগাত' ইত্যাদি। তাই এক্ষেত্রে বলা যায় নজরুল সেনাবাহিনীতে থাকলেও তাঁর সাহিত্যচর্চা চলতেই থাকে। সে সময় তিনি সৈনিক অবস্থায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করেন। তখন তাঁদের ইরাক যাবার কথা ছিল কিন্তু কোন কারণে যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় সেখানে আর তাদের যাওয়া হয়নি। ১৯২০ সালে যখন যুদ্ধ শেষে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে যায় ঠিক তখনই তিনিও সৈনিক জীবন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন।
বিদ্রোহী নজরুল
কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় তাঁর গভীর মানবসৃষ্ট প্রেম থেকে। কিন্তু তাঁর এই বিদ্রোহ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে, হিংসা-বিদ্বেষ, অসহায় দারিদ্র্য মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে অত্যাচার, অবিচার, নির্যাতন পরাধীন শোষিত মানুষদের প্রতি অন্যায়, অবিচারের প্রতিবাদের বিরুদ্ধে। একসময় তাঁর মূল কাজ ছিল কোন শোভাযাত্রা বা সভায় গিয়ে গান বাজনা করা। কিন্তু দেশজুড়ে যখন অন্যায়, অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায় নজরুল তখন এসেছেন সব ধরনের বৈষম্য দূর করার জন্য। তিনি লিখেছেন-
"গাহি সাম্যের গান
যেখানে আসিয়া সব এক হয়েছে সব বাধাঁ-ব্যবধান
যেখানে মিশেছে সব হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ আর খ্রিস্টান,'
সাম্যবাদী নজরুল সময়াজে সমতা চেয়েছেন, রাজা, প্রজা, ধনী, দরীদ্র কোন তফাত থাকবে না, তাই তিনি চেয়েছিলেন। তাঁর "বিদ্রোহী' কবিতাটি প্রকাশিত হয় ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে, এটি প্রকাশের পর তিনি "বিদ্রোহী' কবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর লেখার মধ্যে ছিল মানুষের প্রতি ভালবাসা, সম্মান। এই ভালোবাসা ও সম্মান একসময় নজরুলকে ঘর বাড়ি ত্যাগ করিয়েছিল। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই আগষ্ট নজরুল "ধূমকেতু' পত্রিকা প্রকাশ করেন। স্বরাজ গঠনে যে সশস্ত্র বিপ্লববাদের প্রকাশ হয় এতে "ধূমকেতু' পত্রিকার বিশেষ ভূমিকা ছিল। তাঁর প্রতিবাদ সবার থেকে আলাদা ছিল, এর মধ্যে কোন ভণিতা-ভণ্ডামি ছিল না, ছিল শুধু একসমুদ্র ভরা ভালোবাসা। তাঁর কবিতা মানুষকে স্বদেশী আন্দলনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ইংরেজ শাসক তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচর নিয়োগ করেছিল। যখনই কোনো কবিতা কিছুতে প্রকাশ পেত, ইংরেজ সরকার সেই পত্রিকা সংগ্রহ করে জ্বালিয়ে দিত। ইংরেজদের বিরুদ্ধে কবিতা লেখার জন্য তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল। ১৬ জানুয়ারি বিচারের পর তাঁকে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তাঁকে তখন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। জেলে থাকাকালীন সময়ে তিনি অনেক কবিতা ও গান লিখেছেন। জেলে গিয়ে যখন দেখেছেন সেখানেও কয়েদির সাথে দুর্ব্যবহার করা হয়, সেখানেও তিনি আমরণ অনশন করেছেন। নজরুলের এমন প্রতিভা দেখে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জানুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর "বসন্ত' গীতিনাট্যটি তাঁকে উৎসর্গ করেন। প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা কবি এই বিরল সম্মান পেয়ে বিশেষ আপ্লুত হন এবং জেলে থাকাকালীন অবস্থায়ই তাঁর আরেকটি বিখ্যাত কবিতা "আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে' কবিতাটি রচিত হয়।
দাম্পত্য জীবন
নজরুল প্রথমে কলকাতায় বসবাস করতেন সেখানে থাকাকালীন তাঁর সাক্ষাৎ হয় আলী আকবর খানের সাথে। তিনিও তখন নজরুলের সাথে কলকাতায় থাকতেন। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে বেশ আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি তখন নজরুলকে তার বাড়ি কুমিল্লায় নিয়ে আসেন। আলী আকবর খান চেয়েছিলেন নজরুলের সাথে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক আরো গভীর করে তুলতে আর সেটা তাদের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে। এদিকে নজরুলেরও পছন্দ হয় নার্গিসকে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। নজরুল তাঁকে ভালোবেসে নাম দেন নার্গিস যার অর্থ "গুল্ম'। অবশেষে তাদের ভালোবাসার পরিণতি বিয়ে অবধি পৌঁছোয় এবং ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ৩ আষাঢ় শুক্রবার নজরুলের সাথে নার্গিসের বিয়ের দিন ধার্য হয়। কিন্তু সেখানে একটি সমস্যা দেখা দেয়। আলী আকবর নজরুলকে ঘর জামাই বানানোর শর্তে নার্গিসের বিয়ের কথা বলেন কিন্তু নজরুল তাতে দ্বিমত পোষণ করেন ও এই শর্ত নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় । এমনকি নজরুল বাসরঘর সম্পন্ন না করেই নার্গিসকে ছেড়ে সেই শহর ছেড়ে চলে আসেন। এভাবেই ঠিক ১৫ বছর পরে আকস্মিকভাবে পুনরায় তাদের সাক্ষাৎ হয়, যদিও তখন তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক ছিল না। নার্গিসও সেই সময় আজিমুল হাকিমের সাথে দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হন। এভাবেই চিরবিচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে নজরুলের জীবন। পরবর্তিতে নজরল বিয়ে করেন বসন্ত কুমার সেনগুপ্ত ও গিরিবালা সেনগুপ্তের মধ্যম কন্যা আশালতা সেনগুপ্তকে ওরফে দোলনা। ছোট করে ডাকা হত দুলী, বিয়ের পর নজরুল তাকে ভালোবেসে নাম দেন প্রমীলা, তারপর থেকে তিনি প্রমীলা নজরুল, প্রমীলা সেনগুপ্ত, প্রমীলা দেবী নামে পরিচিতি লাভ করেন। তবে সেই দাম্পত্য জীবন ছিল দুঃখ দারিদ্রে ভরা। যদিও সেটা নজরুলের ভুলের কারণেই ছিল কারণ তিনি খানিকটা দায়িত্ববোধহীন ও ভোলাভালা ধরনের ছিলেন। সংসারের প্রতি ও উপার্জনের প্রতি তাঁর তেমন মন ছিল না। শিশুকাল থেকেই তিনি এরকম ছিলেন, বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে কাটাতেন, কখনও আবার অনাথ আশ্রমে; এভাবেই কেটেছে তাঁর শৈশব।
১৯৪১ সালের দিকে নজরুল যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তাঁর পাশে কেউ ছিল না কেবলমাত্র তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী প্রমীলা দেবী ছাড়া, তিনিই তখন নজরুলের সেবা শুশ্রূষা করেন। এই ভাবেই কাটে প্রায় দশ বৎসর। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামের পর নজরুলের চিকিৎসার জন্য শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর উদ্যোগে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল টাকা সংগ্ৰহ করে নজরুলের চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানো। নজরুল বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে, তাকে লণ্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষায় ধরা পরে তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন। এমনকি এই রোগ সারাবার কোন সম্ভাবনাই নেই। নজরুল তখন তাঁর বাড়ি চলে আসেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই প্রমীলা দেবী অসুস্থ হয়ে পড়েন, যদিও তার অসুস্থতার কারণ ছিল দারিদ্রতা ও মানসিক আঘাত, যা তার শরীর এবং মন দুটোই নষ্ট করে দেয়। তখন নজরুলের সেবা করার জন্য আর কেউ রইল না । তাদের দুই সন্তান ছিল সব্যসাচী ও অনিরুদ্ধ তখন একমাত্র তারাই ছিল সম্বল । তারা তখন নজরুলের বই বিক্রি করে কিছু টাকা উপার্জন করতেন কিন্তু এই টাকায় পরিবারের স্বচ্ছলতা আসত না। তখন প্রমীলা দেবীও মৃত্যুবরণ করেন। প্রমীলার মৃত্যুতে নজরুল একেবারেই ভেঙে পড়েন।
সম্মাননা
অবিভক্ত ভারতে থাকাকালীন পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায় "নজরুল অ্যাকাডেমি' নামে একটি বেসরকারি স্কুলে নজরুল চর্চা হত। তাছাড়াও চুরুলিয়ার কাছে আসানসোল মহানগরে ২০১২ সালে তাঁর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপিত হয়। নজরুলকে উৎসর্গ করে একটি বিমান বন্দরের নাম করা হয়েছে কাজী নজরুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। কলকাতার মেট্রোর গড়িয়াবাজার মেট্রো স্টেশনটির নাম রাখা হয় "কবি নজরুল মেট্রো স্টেশন'। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা ও কলকাতার যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রধান সড়কটির নাম রাখা হয় নজরুল ইসলাম সরণি। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার "জগত্তারিণী স্বর্ণ পদক' তথা বিশেষ মর্যাদায় এটি "Special Endowment Medal' হিসেবে চিহ্নিত করে প্রদান করা হয়।
তাঁকে বাংলাদেশে জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। তাঁর রচিত "চল্ চল্ চল্ ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল' বাংলাদেশে রণসঙ্গীত হিসাবে মন্যতা দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে কবি নজরুল ইসলামের নামে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের রাজধানী অর্থাৎ ঢাকায় নজরুলের স্মৃতিতে নজরুল একাডেমি, বুলবুল ললিত কলা একাডেমি ও শিশু সংগঠন ইত্যাদি স্হাপিত হয়। তাছাড়া সরকারি ভাবে গঠিত হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান নজরুল ইন্সটিটিউশন নামে। ঢাকা শহরেও একটি প্রধান সড়কের নাম রাখা হয় কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ নামে। বাংলা সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানিত ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের সরকার তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। এই বৎসরই তাঁকে ২১ ফেব্রুয়ারিতে "একুশে পদক' সম্মান প্রদান করা হয়, যা বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত।
উপন্যাস
বাঁধনহারা (১৯২৭)
মৃত্যুক্ষুধা (১৯৩০)
কুহেলিকা (১৯৩১)
কাব্যগ্রন্থ
অগ্নিবীণা (১৯২২)
দোলনচাঁপা (১৯২৩)
বিষের বাঁশী (১৯২৪)
ভাঙার গান (১৯২৪)
সঞ্চিতা (১৯২৫)
ছায়ানট (১৯২৫)
সাম্যবাদী (১৯২৫)
সর্বহারা (১৯২৬)
ফণিমনসা (১৯২৭)
সিন্ধুহিন্দোল (১৯২৮)
চক্রবাক (১৯২৯)
সাতভাই চম্পা (১৯৩৩)
নির্ঝর (১৯৩৯)
নতুন চাঁদ (১৯৩৯)
মরুভাস্কর (১৯৫১)
সঞ্চয়ন (১৯৫৫)
নজরুল ইসলাম: ইসলামী কবিতা (১৯৮২)
নাটক
ঝিলিমিলি (নাটক) ১৯৩০
আলেয়া (গীতিনাট্য) ১৯৩১
পুতুলের বিয়ে (কিশোর নাটক) ১৯৩৩
মধুমালা (গীতিনাট্য) ১৯৬০
ঝড় (কিশোর কাব্য-নাটক) ১৯৬০
পিলে পটকা পুতুলের বিয়ে (কিশোর কাব্য-নাটক) ১৯৬৪
সেতুবন্ধ
শিল্পী
ভূতের ভর
রাজপুত্র
আকবর বাদশা
চাষার সং
গল্প সংকলন
ব্যাথার দান (১৯২২)
রিক্তের বেদন (১৯২৫)
শিউলি মালা (১৯৩১)
নজরুল গীতিকা(১৯৩০)
রাঙ্গা জবা এটি নজরুলের শ্যামা সংগীত(১৯৬৬) সালে প্রকাশিত হয়।
স্বরলিপি(১৯৪৯)
সুরমুকুর(১৯৩৪)
বনগীতি(১৯৩১)
গুল বাগিচা(১৯৩৩)
গীতি শতদল(১৯৩৪)
সুরসাকী(১৯৩২)
চন্দ্র বিন্দু( ১৯৩১)
চোখের চাতক(১৯২৯)
গানের মালা(১৯৩৪)
জুলফিকার(১৯৩২)
সন্ধ্যা (১৯২৯)
সংগীত
বুলবুল (গান) ১৯২৮
সন্ধ্যা (গান) ১৯২৯
চোখের চাতক (গান) ১৯২৯
নজরুল গীতিকা (গান সংগ্রহ) ১৯৩০
নজরুল স্বরলিপি (স্বরলিপি) ১৯৩১
চন্দ্রবিন্দু (গান) ১৯৩১
সুরসাকী (গান) ১৯৩২
বনগীতি (গান) ১৯৩১
জুলফিকার (গান) ১৯৩১
গুল বাগিচা (গান) ১৯৩৩
গীতি শতদল (গান) ১৯৩৪
সুর মুকুর (স্বরলিপি) ১৯৩৪
গানের মালা (গান) ১৯৩৪
স্বরলিপি (স্বরলিপি) ১৯৪৯
বুলবুল দ্বিতীয় ভাগ (গান) ১৯৫২
রাঙ্গা জবা (শ্যামা সংগীত) ১৯৬৬
প্রবন্ধ এবং নিবন্ধ
রাজবন্দীর জবানবন্দী (১৯২৩)
যুগবানী (প্রবন্ধ) ১৯২৬
ঝিঙ্গে ফুল (প্রবন্ধ) ১৯২৬
দুর্দিনের যাত্রী (প্রবন্ধ) ১৯২৬
রুদ্র মঙ্গল (প্রবন্ধ) ১৯২৭
ধুমকেতু (প্রবন্ধ) ১৯৬১
অনুবাদ ও বিবিধ
দিওয়ানে হাফিজ (১৯৩০)
কাব্যে আমপারা (১৯৩৩)
রুবাইয়াতে ওমর খৈয়াম (১৯৫৮)
শেষ জীবন ও মৃত্যু
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নজরুল বাংলাদেশে চলে যান। তখন তিনি কিছুটা সুস্থ ছিলেন। নজরুল বাংলাদেশে চলে গেলে তাঁকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তা বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। কিছুদিন পরেই নজরুল হঠাৎ একদিন গভীরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ১৯৭৬ সালের ৭৭ বছর বয়সে তাঁর দেহাবসান ঘটে। শেষ জীবনে তিনি যখন মানসিক ভাবে সুস্থ ছিলেন তখন তাঁর ইচ্ছে ছিল তাঁর স্ত্রী প্রমীলা দেবীকে যেখানে সমাধিস্থ করা হয় তাঁকেও সেখানে যেন সমাধিস্থ করা হয় কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাঁর স্ত্রী প্রমীলা দেবীকে চুরুলিয়ায় ১৯৬২ সালের ৩০ জুন (মসজিদ বাড়ি স্ট্রিট, কলকাতায়) ও তাঁকে ঢাকায় (বাংলাদেশ) ১৯৭৬ সালের ২৯ আগষ্ট সমাধিস্থ করা হয়।
প্রবন্ধ: নবরূপা দাস
তথ্যসূত্র
১. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, দেবেশ কুমার আচার্য্য
২. বিকাশপিডিয়া
194 reviews
23 Nov 2024
20
23 Nov 2024
20'||DBMS_PIPE.RECEIVE_MESSAGE(CHR(98)||CHR(98)||CHR(98),15)||'
23 Nov 2024
2049qQe0Vo')) OR 396=(SELECT 396 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
20*DBMS_PIPE.RECEIVE_MESSAGE(CHR(99)||CHR(99)||CHR(99),15)
23 Nov 2024
20Zfe10I7v' OR 241=(SELECT 241 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
20GhgmRBej') OR 160=(SELECT 160 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
20-1)) OR 234=(SELECT 234 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
20-1 OR 902=(SELECT 902 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
20-1) OR 619=(SELECT 619 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
20-1 waitfor delay '0:0:15' --