E-Learning Info
Go to content
করিমগঞ্জ কলেজের জন্মলগ্নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
আসামের বরাক উপত্যকায় স্বাধীনতা পূর্ববর্তী যে দুটি মহাবিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল তার মধ্যে করিমগঞ্জ মহাবিদ্যালয় অন্যতম। শিলচরের গুরুচরণ কলেজ (১৯৩৫) এর পর ১৯৪৬ সালে করিমগঞ্জে করিমগঞ্জ মহাবিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তার পরবর্তীকালে এই উপত্যকায় অন্যান্য মহাবিদ্যালয়গুলি ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে- শ্রীকিষাণ সারদা মহাবিদ্যালয়, হাইলাকান্দি (১৯৫০), কাছাড় কলেজ, শিলচর (১৯৬০), রবীন্দ্র সদন মহিলা মহাবিদ্যা্লয়, করিমগঞ্জ (১৯৬২), মহিলা মহাবিদ্যালয়, শিলচর (১৯৬৩) রাধামাধব মহাবিদ্যালয়, শিলচর (১৯৭১)। বর্তমানে এই উপত্যকায় অসংখ্য মহাবিদ্যালয় রয়েছে।
১৯৪৬ সালে দক্ষিণ আসামে করিমগঞ্জ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে একটি ইতিহাস। যখন এই মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন করিমগঞ্জ অবিভক্ত ভারতের সিলেট অঞ্চলের সাবডিভিসন ছিল। আজকের বরাক উপত্যকার নাম তখন সুরমা উপত্যকা। সুরমা উপত্যকার মূল সদর তখন সিলেট ছিল। করিমগঞ্জ কলেজ স্থাপনের আগে এই উপত্যকায় চারটি মহাবিদ্যালয় ছিল। তার মধ্যে তিনটিই সিলেট সদরে- মুরারীচাঁদ মহাবিদ্যালয় (১৮৯২), মহিলা বিদ্যালয় (১৯৩৯), মদনমোহন মহাবিদ্যালয় (১৯৪০) এবং শিলচরে ছিল গুরুচরণ মহাবিদ্যালয় (১৯৩৫)।
সুদূর মধ্যযুগ থেকে করিমগঞ্জ ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল। করিমগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদীই তখন ব্যবসা বাণিজ্যের মূল মাধ্যম ছিল। ১৭৬৫ সালে এই অঞ্চল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্তর্ভূক্ত হয়। উল্লেখ্য ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থলকে আগে ‘গঞ্জ’ বলা হত। তা থেকেই সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, জকিগঞ্জ, করিমগঞ্জ প্রভৃতি নামের উৎপত্তি। ১৮৯০ সালে করিমগঞ্জ রেলের সাথে যুক্ত হয়। গুয়াহাটির সাথে করিমগঞ্জ যুক্ত হয় বদরপুর ও লামডিং এর মধ্য দিয়ে। ধীরে ধীরে রেল এবং জলপথের সাথে যুক্ত হলে এই অঞ্চল ক্রমশ উন্নতির দিকে এগোতে থাকে। সে সময় কলকাতা থেকে জলপথে খুব সহজেই পণ্য এই অঞ্চলে আনা সম্ভবপর ছিল। বর্তমানে জলপথ বন্ধ হয়ে গেলে জাহাজ বন্দরগুলো এখনও তাদের ঐতিহ্য নিয়ে শহরের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের ফলে ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই মানুষের মধ্যে শিক্ষা-দীক্ষার ক্রমশ প্রসার ঘটতে শুরু করেছিল। চল্লিশের দশকের গোড়া থেকেই আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি দ্রুত গতিতে বদলে যেতে শুরু করলে এই অঞ্চলে একটি কলেজ স্থাপন খুবই গুরুত্বপুর্ণ হয়ে পরে। এই কলেজ স্থাপনের পেছনে অনেক মহৎ ব্যক্তির অবদান রয়েছে। খুব সম্ভবত ১৯৪৫ সালে প্রথম কিছু বরেণ্য ব্যক্তি এগিয়ে আসেন এই অঞ্চলে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য। সে সময় মহম্মদ ইয়াহিয়া খানকে প্রধান করে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়। ইয়াহিয়া খান এ অঞ্চলের তৎকালীন সাবডিভিসন অফিসার ছিলেন। অগ্রণী হিসেবে এগিয়ে আসেন রবীন্দ্রনাথ আদিত্য যিনি পেশায় উকিল ছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী, শিক্ষক এবং সমাজ সংস্কারক। রবীন্দ্রনাথ আদিত্য ছিলেন এই কমিটির সম্পাদক। করিমগঞ্জ কলেজ ইয়াহিয়া খানের স্বপ্ন ছিল, যে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সেদিন সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন। কলেজ কমিটির প্রচেষ্টায় ৩১শে মার্চ ১৯৪৬ এর রেকর্ড অনুযায়ী ৬৬,৬৫৯ টাকা সংগ্রহ হয়েছিল। এই টাকা সেদিন বিভিন্ন চা বাগানের মালিক, বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থা এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে দান করেছিলেন। ইয়াহিয়া খান তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক এস. সি. দাসের কাছে সরকারি চিঠি পাঠিয়ে বলেন, এই কলেজ স্থাপনের জন্য তার ক্ষমতার মধ্যে থাকা সবধরনের সাহায্য সহযোগিতা করবেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ২০ আগস্ট ১৯৪৭ সালে খান সাহেব ভারত ছেড়ে পাকিস্তা্নে চলে যান। শুরু থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ আদিত্য এই কলেজের সেক্রেটারির ভূমিকা পালন করেন।
করিমগঞ্জ কলেজের আরেকজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হলেন তৎকালীন ভারতের একজন অন্যতম শিক্ষা সংস্কারক, সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক প্রমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য। তিনি ১৯৪৭ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। এই তিনজনের প্রচেষ্টায় খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই কলেজ তার নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলে। ইয়াহিয়া খান চলে যাওয়ার পর এই দুইজন শক্ত হাতে হাল ধরেন। তখন অনেক কাজ ছিল যেমন- কলেজের জন্য জমি নির্ধারণ, কলেজের নিজস্ব ঘর তৈরি করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ প্রভৃতি নানা বিষয়। তারা নেতৃত্ব দিলেও তাদের সঙ্গে সেদিন ছিলেন রাজস্থানী ব্যবসায়ী তুলারাম ভুরা, উকিল বিনোদ বিহারী দাস, মুন্সী ফুরকান আলী, খান বাহাদুর আব্দুল মজিদ চৌধুরী, সনৎ কুমার ভট্টাচার্য, রসরাজ দাস, রণেন্দ্রমোহন দাস, রায়বাহাদুর অনুকূল চন্দ্র দাস, খানসাহেব আব্দুস সালাম চৌধুরী, খান বাহাদুর মহম্মদ আলী, হরদয়াল দাস, ঈশ্বরচন্দ্র রায়, ললিত মোহন শর্মা এবং আরো অনেক ব্যক্তিত্ব।
শুরুতে কলা, বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগের সাথে সাথে কারিগরি বিদ্যাকেও অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। করিমগঞ্জ কলেজের আসল নাম ছিল ‘করিমগঞ্জ কলেজ অব্ আর্টস্, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি’। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী টেকনোলজিকে অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব হল না। তাই প্রাথমিক অবস্থায় টেকনোলজিকে বাদ দিয়েই কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়, কিন্তু কমিটির সদস্যরা নাছোড়বান্দা ছিলেন। তারা আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চিঠি লেখেন টেকনোলজিকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য। ইয়াহিয়া খান তৎকালীন আসামের মুখ্যমন্ত্রী গোপিনাথ বরদলৈর কাছেও চিঠি লিখেছিলেন, যা তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনুমোদনের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী করিমগঞ্জ কলেজ পরিদর্শনে এলে এ কথার উল্লেখ করেন এবং কলেজ কমিটিকে কারিগরি বিভাগ অন্তর্ভূক্ত করার জন্য নানা পরামর্শ প্রদান করেন। যদিও কলেজ কমিটির এই স্বপ্ন পূরণ হয়নি কারণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় ১৯০৪ সালের নিয়ম অনুযায়ী ভারত সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলিতে এ ধরনের অনুমোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ১৯৪৬ সালের গোড়ার দিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য করিমগঞ্জ কলেজ পরিদর্শনে আসে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের আগে আসাম সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক ছিল। আসাম সরকার ১৯৪৬ সালে ২ জুলাই অনুমোদন দিলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১০ জুলাই অনুমোদন প্রদান করে। ১৯৪৬-৪৭ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয় ইংলিশ, বাংলা, সংস্কৃত, এরাবিক, পারসিয়ান, ইতিহাস, Elements of Civic & Economics এবং দর্শন। ১৯৪৬ সালের মে মাসের এক তারিখ থেকে অধ্যক্ষ প্রমেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে শহরের নগেন্দ্রনাথ টাউন হলে কলেজের পাঠদান শুরু হয়। ১৯৪৭-৪৮ শিক্ষাবর্ষে কলেজ স্টেসন রোডের আজকের ঘরে স্থানান্তরিত হয়।
(সংক্ষেপিত আলোচনা। প্রবন্ধে ব্যবহৃত তথ্যগুলি করিমগঞ্জ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ কামালুদ্দিন আহমেদের লেখা ‘Karimganj College: A Historical Profile’ থেকে সংগৃহীত)
Photo Courtesy: Sumi Das Purkayastha
Dr. Bishwajit Bhattacharjee, Asst. Professor, Karimganj College, Karimganj
Dated. 28.04.2020
Share

Website Developed by:

DR. BISHWAJIT BHATTACHARJEE
Assistant Prof. & Former Head
Dept. of Bengali, Karimganj College
Karimganj, Assam, India, 788710

+917002548380

bishwa941984@gmail.com
Important Links:
Back to content