E-Learning Info
Go to content

জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশ একাধারে কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। বাংলা কাব্যে যে সকল আধুনিক কবি আছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। পুরাণের জগত, গ্ৰামবাংলার চিত্র তাঁর কাব্যে প্রধান হয়ে উঠেছে। প্রথমদিকে তাঁর কাব্যে নজরুল, মোহিতলাল ও সত্যেন্দ্রনাথের এসকল কবিদের প্রভাব থাকলেও পরবর্তীকালে বাংলা কাব্যে তিনি হয়ে উঠেন ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী। তাঁর কবিভাব ছিল পুরো আলাদা চিন্তা ও সিদ্ধান্ত বা কোন প্রশ্ন মতবাদ এর ভিতর থেকে পরাচেতনার শব্দরূপ আবিষ্কার ক‍রা।
জন্ম ও শৈশব
জন্ম-১৮৯৯সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার , বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ব্রিটিশ ভারত (বাংলাদেশ)
পিতা-সত‍্যানন্দ দাশ , তিনি ছিলেন একজন সমাজসেবক ও শিক্ষক।
মাতা- কুসুম কুমারী দাশ, তিনি সাধারণ গৃহিনী হলেও , গান, কবিতা ইত্যাদি লিখতেন।
পিতামহ-সর্বানন্দ দাশগুপ্ত।
     জীবনানন্দ দাশ ছিলেন পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান, তাঁর ডাক নাম ছিল মিলু । তাঁর ভাই বোন ছিলেন অশোকানন্দ দাশ ও বোন সুচরিতা দাশ। তিনি মূলত বরিশাল শহরে জন্মগ্ৰহন করলেও তাঁর আদিনিবাস ছিল বিক্রমপুর। জীবনানন্দের অনেক কম বয়সেই স্কুলে ভর্তি হওয়া নিয়ে পিতার আপত্তি ছিল  বলে বাড়িতে মায়ের কাছেই বাল‍্যশিক্ষাগ্ৰহন শুরু হয় । শৈশবে  জীবনানন্দ অর্থাৎ মিলু অনেক লাজুক স্বভাবের ছিলেন, খেলাধুলা, ভ্রমণ, সাতাঁর কাটা এসবের প্রতি তাঁর অনেক মনযোগ ছিল। তাছাড়াও ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে মায়ের মিষ্টি সুরের গান ও পিতার কন্ঠের কবিতা আবৃত্তি শুনতেন। ছেলেবেলায় তিনি মামার সাথে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তাঁর অসুস্থতা মাতাকে অনেক চিন্তিত করে তুলে । তিনি তখন তাঁর পিতা অর্থাৎ মিলুর মাতামহ ও হাসির গানের কবি চন্দ্রনাথের সাথে পরামর্শ করে লক্ষ্মৌ, আগ্রা ,দিল্লী প্রভৃতি স্হানে  ঘুরে বেড়িয়েছেন মিলুর চিকিৎসার জন‍্য । জন্মসূত্রে তাঁর পদবি "দাশগুপ্ত" হলেও তিরিশ দশকের প্রথমেই তিনি "গুপ্ত" উপাধি ত‍্যাগ করে "দাশ" লেখা শুরু করেন।
শিক্ষা জীবন:-
_______
জীবনানন্দের প্রথম শিক্ষার সূত্রপাত হয় ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। তারপর থেকেই তাঁর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচনা শুরু হয়। তাছাড়াও অবসর সময়ে ছবি আকঁতেন। ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ নিয়ে পাশ করেন। এভাবেই ঠিক দুবছর প‍র ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পূর্বের ফলাফল থেকে আরো ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাশ করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ও বরিশাল ত‍্যাগ করলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজীতে অনার্স নিয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন  ব্রাম্ম‍বাদী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায়  তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ,কবিতাটি হল "বর্ষ আবাহান" এই কবিতার প্রথম দিকে তাঁর নাম ছাপা হয়নি শুধু শ্রী লেখা ছিল তারপর একদম শেষের দিকে তাঁর নাম ছাপা হয় শ্রী জীবনানন্দ দাশ , বি,এ । জীবনানন্দ সর্বদাই একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন, বি,এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইংরেজীতে দ্বিতীয় শ্রেনীতে এম,এ ডিগ্রি লাভ করেন। তবে এবারের ফলাফল তেমন ভালো হয়নি এর কারণ পরীক্ষার ঠিক  কয়েকদিন আগেই তিনি আমাশয় রোগে আক্রান্ত হন , যার ফলে তাঁর প্রস্তুতি নষ্ট হয়ে যায়।  এসব কিছুর পর তিনি আইন বিষয়ে পড়া শুরু করেন কিন্তু এই পড়া শুরু করার খুব অল্প দিনের মধ্যেই তিনি তা পরিত্যাগ করেন। শেষে জীবনানন্দ কলকাতার সিটি কলেজে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে টিউটর হিসেবে অধ্যাপনা করেন।
বিবাহ:- জীবনানন্দ ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মে ঢাকার ব্রাম্মসমাজ মন্দিরে রোহিনীকুমার গুপ্তের কন্যা লাবণ্য গুপ্তকে বিয়ে করেন। তাদের মজ্ঞুশ্রী দাশ ও সমরানন্দ দাশ নামে এক কন্যা  ও এক পুত্র ছিল।

কর্মজীবন:-তাঁর কর্মজীবনের শুরু ও সমাপ্তি অধ‍্যাপনা দিয়ে তিনি অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ‍্যাপনা করেছেন যার মধ্যে হল প্রথম কলকাতার সিটি কলেজ(১৯২২-১৯২৮) তারপর খড়গপুর কলেজ (১৯৫১-১৯৫২), বড়িশা কলেজ (অধুনা বিবেকানন্দ কলেজ কলকাতা ১৯৫৩) ও হাওড়া গার্লস কলেজ(১৯৫৩-১৯৫৪) এই সকল কলেজে তিনি অধ্যাপনা করেন। তবে তাঁর কর্মজীবন তেমন ভালো কাটেনি, সেটা চাকুরীর ক্ষেত্রে হোক বা তাঁর ব‍্যক্তিগত জীবনেও অনেক কষ্ট দিয়েছে। তিনি যখন চরম দারিদ্রতা ও অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছেন তখন তাঁর স্ত্রী লাবণ্য দাশ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন । তিনি তখন একটি স্কুলে শিক্ষকতা করে সংসারের অভাব কিছুটা হলেও পোষণ করেছেন‌ । তবে এ ক্ষেত্রে শুধু লাবণ‍্য নয় জীবনানন্দ ও তখন অধ্যাপনার পাশাপাশি কোন এক ইন্সুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন, এছাড়া ও কোন কোন সময় ব‍্যবসা করার ও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পুরোপুরি মরণাপন্ন অবস্থায় ও হাওড়া গার্লস কলেজে কর্মরত ছিলেন।

Bishwajit Bhattacharjee, [11.06.21 16:19]
সাহিত্য জীবন:-জীবনানন্দ ছেলেবেলা থেকেই অনেক গল্প, কবিতা, গদ্য ইত্যাদি লিখতেন। এভাবেই ১৯১৯ সালের দিকে তার প্রথম লেখা একটি কবিতা বর্ষা আহবান ব্রাম্মবাদী পত্রিকায়১৩২৬ সালের বৈশাখ মাসে প্রকাশিত হয়। যদিও প্রথমে তাতে তাঁর নাম ছিল না পরবর্তীতে ১৯২৭ সাল থেকে তাঁর নাম পুরো লেখা হয় শ্রী জীবনানন্দ দাশ । জীবিকা দশ্শায় তাঁর একমাত্র পরিচয় ছিল কবি, যেহেতু তাঁর পারিবারিক জীবনে অনেক অভাব অনটন ছিল তাই অর্থের জন্য তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখে প্রকাশ করেন , এরপর দীনেশ রঞ্জন সম্মাদিত কল্লোল পত্রিকায়(১৩৩২- ১৯২৬) সালের ফাল্গুন সংখ্যায় তাঁর নীলিমা শীর্ষক কবিতাটি প্রকাশিত হয়। তারপর ১৯২৫ সালের ১৬ জুন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এর মৃত্যু হলে তিনি তখন তাঁর কারণে শিরোনামে একটি কবিতা লিখেন যা বংগবাণী পত্রিকার ১৩৩২ সালের শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় । জীবিকাদশ্শায় তাঁর ৭টি কাব‍্যগ্ৰন্হ প্রকাশিত হয় । তাঁর মধ্যে প্রথম প্রকাশিত কবিতা হল ঝরাপালক। তবে এতে তার মূলভাব ফুটে উঠেনি ফলস্বরূপ এতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মোহিতলাল মজুমদার, ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের বিশাল প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । কিন্তু খুব শ্রীঘ্রই তিনি পুনরায় কবিভাব ফিরে পান, এবং এটি সম্ভব হয়েছে তাঁর দ্বিতীয় কাব্য ধূসর পাণ্ডুলিপিতে। এবং এতে তাঁর কবিত্বশক্তি ফুটে ওঠে।
পুরস্কার:- জীবনানন্দ প্রথমে রবীন্দ্রসাহিত‍্য সম্মেলনে ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে  পরিবর্ধিত সিগনেট সংস্করণে তাঁর "বনলতা সেন" কাব‍্যগ্ৰন্হটি বাংলা ১৩৫৯ এর কাছাকাছি শ্রেষ্ঠ কাব‍্যগ্ৰন্হ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। তারপর কবির মৃত্যুর পর ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে জীবনানন্দের শ্রেষ্ঠ কবিতা সাহিত্য অকাদেমি ১৯৫৪ সালে পুরস্কৃত হয়।

কাব‍্যগ্ৰন্হ:- রূপসী বাংলা( ১৯৩৪- ১৯৫৭)
বনলতা(১৯৪২)
মহাপৃথিবী (১৯৪৪)
বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)
ধূসর পাণ্ডুলিপি(১৯৩৬)
সাতটি তারার তিমির(১৯৪৮)

গল্প:-সুবিনয় মুস্তাফী (১৯৭২)
মান্নান সৈয়দ(১৯৮৯) এটি তাঁর শ্রেষ্ঠ গল্প।
উপন্যাস:- মাল‍্যবান (১৯৭৩)
সতীর্থ(১৯৭৭)
অপ্রকাশিত উপন্যাস
জল পাইহাটি(১৯৪৮)
বাসমতীর উপাখ্যান(১৯৪৮)
বিভা( ১৯৩৩)
নিরুপম যাত্রা(১৯৩৩)
জীবন প্রণালী( ১৯৩৩)

মৃত্যু:- ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর ট্রাম দুর্ঘটনায় মাত্র ৫৫ বছর  বয়সে মৃত্যু বরণ করেন।

Website Developed by:

DR. BISHWAJIT BHATTACHARJEE
Assistant Prof. & Former Head
Dept. of Bengali, Karimganj College
Karimganj, Assam, India, 788710

+917002548380

bishwa941984@gmail.com
Important Links:
Back to content