E-Learning Info
Go to content
দেবেন্দ্রনাথ সেন (জন্ম: ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দ - মৃত্যু ১৯২০ খ্রিস্টাব্দ)
আধুনিক গীতিকবিতা ইতিহাসে এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত দেবেন্দ্রনাথ সেন। তিনি ১৮৫৫ সালে  উত্তর প্রদেশের গাজীপুরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁদের আদি নিবাস অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার বলাগড় গ্রাম৷ রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক কবিদের মধ্যে ইনি অগ্রগণ্য। দেবেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের কবিতার ভক্ত ছিলেন। তাঁর কবিতায় ঘরোয়া ভাব এবং স্নেহ, প্রেম এবং ভক্তির সরল প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। দেবেন্দ্রনাথ সেন পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন।
শিক্ষাজীবন:
তিনি ১৮৭২ সালে পাটনা কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাস করেন এবং ১৮৭৪ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে সম্মানের সহিত এফএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তার কয়েক বছর পর এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হন। ১৮৮৬ এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) পাস করেন। তিনি ১৮৯৩ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ (প্রাইভেট) পরীক্ষা পাশ করেন। তারপর তিনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের একজন বিশিষ্ট আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন।
সাহিত্যকর্ম:
উনিশ শতকে আধুনিক ধারার গীতিকবিতার অন্যতম একজন কবি দেবেন্দ্রনাথ সেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভক্ত ছিলেন যার স্পষ্ট ছাপ তার কবিতায় ফুটে উঠে। তিনি "রবীন্দ্র বাবুর সনেট’ নামে একটি কবিতার রচনা করেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সোনার তরী কাব্য গ্রন্থটি দেবেন্দ্রনাথ সেন কে উৎসর্গ করেছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ সেন প্রথম জীবনে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে অনেকটা অনুসরণ করেছিলেন তাঁর কাব্য রচনায়। তাঁর ‛উর্মিলা কাব্য’ (১৮৮১), ‛অপূর্ব বীরাঙ্গনা’ (১৯১২) কাব্যগ্রন্থগুলিতে মাইকেলের অদৃশ্য প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই সমন্ধে তিনি এক জায়গায় বলেছেন,
“ আমি পুরাতন স্কুলের — মাইকেল মধুসূদন, হেমচন্দ্রের ‘স্কুলে’র  কবি। এই রবীন্দ্র জুগিয়ে আমাদের নেয়ায় কোভিদ আদর হয়াই শক্ত। ”
তিনি মাইকেল মধুসূদন বিহারীলাল অক্ষয় কুমার বড়াল প্রভৃতি কবিদের অনুসারী হলেও তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র ভাবধারার। তাঁর কবিতায় মাইকেলের দৃঢ়তা নেই। সমসাময়িক অক্ষয় কুমার বড়ালের মতো গভীরতা নেই অথবা বিহারীলালের মতো নেই কোনো আত্মবিহ্বলতা। তার কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল জগৎ ও জীবনের প্রতি প্রসন্ন তন্ময় দৃষ্টি। বিহারীলাল ছিলেন রোমান্টিক ভাবধারার গীতিকবি কিন্তু তিনি অন্যান্য রোমান্টিক গীতিকবিদের মত কৃত্রিম ব্যর্থতার বিষন্ন পরিমণ্ডল সৃষ্টি করেননি। তিনি জননী এবং যার মধ্যেই নারী জীবনের বিচিত্র রোমান্স খুঁজে বেড়িয়েছেন। তাঁর কাছে নারী শুধু বিশুদ্ধ সৌন্দর্যের নিরবয়ব মূর্তি হয়ে থাকে নি। কবি বলেছেন তিনি রুপের পুজারী। তিনি তার কল্পনায় সর্বদাই রূপকে কামনা করেছেন —
           “চিরদিন চিরদিন                রূপের পূজারী আমি
                               রূপের পূজারী,
             সারা সন্ধ্যা সারা নিশি         রূপ বৃন্দাবনে বসি
                               হিন্দোলায়ে দুলে নারী আনন্দে নেহারি।”
দেবেন্দ্রনাথের কবিসত্তার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো গার্হস্থ্যরস যা তার কবিতাকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। তাছাড়া তিনি অনেকগুলি সনেট রচনা করেন যা প্রশংসার দাবি রাখে। তাঁর একটি বিখ্যাত সনেট কবিতা হল ‛মা’ । তিনি তার কাব্য রীতিকে কেউ কেউ ‛শ্লথ ও অসমান’ নিন্দা করলেও তা যুক্তিসঙ্গত নয়। তাঁর কবিতায় একদিকে ইন্দ্রিয়ালুতা এবং সৌন্দর্যবোধ অন্যদিকে পারিবারিক জীবনের সহজ সরল সুখ-দুঃখ এত সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে যা তাকে আধুনিক গীতি কবি হিসাবে বাঙালির হৃদয়ে জায়গা করে নিতে সাহায্য করেছে।
কাব্য গ্রন্থ:
ফুলবালা                   ঊর্মিলা(১৮৮১)     
নির্ঝরিণী  (১৮৮১)       প্রদীপ(১৮৮৪)  
কনকাঞ্জলি(১৮৮৫)       ভুল (১৮৮৭)
অশোকগুচ্ছ (১৯০০)     অপূর্ব নৈবেদ্য(১৯১২)
অপূর্ব বীরাঙ্গনা(১৯১২)   অপূর্ব ব্রজাঙ্গনা (১৯১৩)
গোলাপগুচ্ছ (১৯১২)     শেফালিগুচ্ছ (১৯১২)
পারিজাতগুচ্ছ (১৯১২)    খৃষ্ট-মঙ্গল (১৯১২)
আদর্শ যাত্রী - সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত অনূদিত (১৯১০)
শঙ্খ(১৯১০)               এষা(১৯১২)   
হরি মঙ্গল (১৯০৫)        কৃষ্ণমঙ্গল       
গৌরাঙ্গ মঙ্গল
মৃত্যু:
তিনি শেষ জীবনে দেরাদুনে স্বাস্থ্যোদ্ধারে যান । সেখানেই ১৯২০ সালের ২০  নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।
প্রবন্ধঃ রাজর্ষি মোহান্ত
তথ্যসূত্র:
বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত, ড.অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ।
বাঙ্গালা সাহিত্যের কথা, শ্রী সুকুমার সেন - সপ্তম সংস্করণ
(প্রকাশিত: ১২.০৫.২০২১)
There are no reviews yet.
0
0
0
0
0

Website Developed by:

DR. BISHWAJIT BHATTACHARJEE
Assistant Prof. & Former Head
Dept. of Bengali, Karimganj College
Karimganj, Assam, India, 788710

+917002548380

bishwa941984@gmail.com
Important Links:
Back to content