E-Learning Info
Go to content
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
অথচ ভারতবর্ষ তাদের
কোথায় তাদের ঘর? ত্রিপুরায়, আসামে, বাংলায়
সাঁওতাল পরগণায়, দাক্ষিণাত্যে, মেঘালয়ে
ঘর কোথায়? পাহাড়ে, জঙ্গলে, চা-বাগানে, কয়লা-খনিতে,
তারা হাঁটে, কুঁজো হয়ে কাজ করে, আধপেটা খায়, বিনা চিকিৎসায় মরে।
কিংবা কপালের জোরে বেঁচে থাকে
কোথায় তাদের মান? দেশ থাকতে দেশ নেই,
                         পথের ঠিকানা নেই
অথচ ভারতবর্ষ তাদের রক্ত ও হাড়– তারাই গড়েছে
                           এই মহাদেশ
শত শতাব্দীর শ্রমে, পরিচ্ছন্ন শততায়, মানবিক
                       শুভেচ্ছায়-বোধে!
রাজা আসে যায় ?
রাজা আসে যায়           রাজা বদলায়
নীল জামা গায়             লাল জামা গায়
এই রাজা আসে            ওই রাজা যায়
জামা কাপড়ের             রং বদলায়...
                              দিন বদলায় না!
গোটা পৃথিবীকে গিলে খেতে চায় সে-ই যে ন্যাংটো ছেলেটা
কুকুরের সাথে ভাত নিয়ে তার লড়াই চলছে, চলবে!
পেটের ভিতর কবে যে আগুন জ্বলছে এখনো জ্বলবে!    
রাজা আসে যায়            আসে আর যায়
শুধু পোশাকের              রং বদলায়
শুধু মুখোশের               ঢং বদলায়—
          পাগলা মেহের আলি
           দুই হাতে দিয়ে তালি
এই রাস্তায়, ওই রাস্তায়
           এই নাচে, ওই গান গায় :
‘সব ঝুট হায়! সব ঝুট হায়! ঝুট হায়! সব ঝুট হায়'।
জননী জন্মভূমি
সব দেখে               সব শুনেও অন্ধ তুমি!
সব জেনে               সব বুঝেও বধির তুমি!
         তোমার ন্যাংটো ছেলেটা
                    কবে যে হয়েছে মেহের আলি
         কুকুরের ভাত কেড়ে খায়
                    দেয় কুকুরকে হাততালি—
তুমি বদলাও না;
সে-ও বদলায় না।
স্থিরচিত্র
(শ্রী গোপাল মৈত্র, সুহৃদ্বরেষু)
সবই তো একরকম
আমাদের চোর পুলিশ স্কুল কলেজ হাসপাতাল,
এই দেশে মানুষের পা রাখার জায়গা কোথায় ?
এখানে শিশুরা আসে জন্মনিয়ন্ত্রণের হুকুম মেনে;
এখানে বেকার যুবকরা মাইলের পর মাইল
এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের লম্বা কিউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে
এক প্রাগৈতিহাসিক ক্ষুধার স্পর্ধাকে
তাদের বুকের হাড় আর পিঠের চামড়া খুলে দেয়
যা তাদের বেঁচে থাকার মাশুল।
কিছুই বদলায় না। আমাদের স্বপ্নগুলি
বিকলাঙ্গ ভিক্ষুকদের মতো
সমস্ত দিন, সমস্ত রাত যাকেই সামনে পায়
তারই পা-জড়িয়ে ভিক্ষা চায়;
যে দৃশ্য আমরা জন্ম থেকে দেখে আসছি।
তবু আমরা অপেক্ষা করি; এক মন্ত্রী যায়,
অন্য মন্ত্রী আসে
আমরা তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।
আমাদের বুকের ভেতর বোবা শব্দগুলি আর একবার মুখর হয়ে ওঠে;
‘আল্লা! মেঘ দে! পানি দে!’
আর প্রতিশ্রুতিগুলি কাগজের নৌকার মতো
বর্ষার একহাঁটু জলে ইতস্তত ভেসে যায়
যুদ্ধের বিরুদ্ধে
 
চলো আমরা চাঁদের দেশে যাই
চলো আমরা সব থাকতে যে যার দেশের জাতীয় পতাকা
চাঁদের দেশের সবার চাইতে উঁচু পাহাড়টার
চুড়ায় দিই উড়িয়ে, তার মাটিকে করি সোনার চেয়ে দামী !
পৃথিবীতে কোথাও আর নদী পাহাড় আকাশ
কোথাও আর ঘুমিয়ে থাকার ছ’ফুট জমি নেই।
একটি পাখির বাসা গড়ে তোলার মতো সামান্য আশ্রয়
একটি ঘাসের দাঁড়িয়ে থাকার মাটি
আজ আমাদের অতীত ইতিহাসের স্বপ্ন, ঠাকুরমার মুখের রূপকথা।
মিছেই মানুষ বেতারে টেলিভিশনে সাংবাদিকের গোলটেবিল বৈঠকে
পরস্পরকে নিন্দা করার উজ্জ্বলতায় নিজের মুখে দেখতে চায় আলো
মিছেই মানুষ নিজের দেশের নিজের দলের গর্ব করে।
আসলে তার পায়ের নিচে কোথাও আর মাটির কোনো চিহ্ন নেই
ছ'ফুট জমি মেপে নিয়ে যেখানে উপনিবেশ গড়া যায়।
চলো আমরা চাঁদের দেশে যাই
সময় থাকলে সোনার চেয়ে মূল্যবান চাঁদকে দিই জাতীয় সঙ্গীত ।
অতঃপর চাঁদ ফুরোলে, ঠাকুরমার শোলোক শেষ হলে
আবার আমরা নতুন অঙ্ক কষব, শনি, বৃহস্পতি, মঙ্গলের ভূমি
অগস্ত্যের মতো আমরা শুষে নেব, শান্তিকামী মানুষ;
বেঁচে থাকতে ছ’ফুট জমি চাই।
মুখোশ
কান্নাকে শরীরে নিয়ে যারা রাত জাগে,
রাত্রির লেপের নিচে কান্নার শরীর নিয়ে করে যারা খেলা
পৃথিবীর সেইসব যুবক-যুবতী
রোজ ভোরবেলা
ঘরে কিংবা রেস্তোরাঁয় চা দিয়ে বিস্কুট খেতে খেতে
হঠাৎ আকাশে ছোঁড়ে-দু'চারটি কল্পনার ঢেলা;
এবং হাজারে কয় রান করে আউট হয়ে গেছে
ভুলে গিয়ে তারা হয় হঠাৎ অদ্ভুত।
যুবতীকে মনে হয়, হয়তো বা সেরে গেছে সকল অসুখ,
যুবককে মনে হয়, কোনো এক রহস্যের দূত
কার যেন স্মৃতিসুখ পাঠায়েছে আমাদের মতো কোনো প্রণয়ীর কাছে
সুন্দর কি কুৎসিত জানি না, তবু জানি মার্চেন্টের মারে নেই এইসব খুঁত।
কান্না সরিয়ে রেখে দৈনিক কাগজ খুঁজি তাই,
যুবককে ভুলে যাই, যুবতীকে দূরে দূরে রাখি;
তারপর কোনোদিন যদি মনে হয়
দিনগুলি বাসি বড়ো বিবর্ণ একাকী
প্রেমিক কি উদ্বাস্তুর মতো এক সমস্যায় নিতান্তই মূর্খ হয়ে গেছে;
আমার কি আসে যায়, তুড়ি মেরে এগজামিনে দিয়ে যাবো ফাঁকি!
অথবা কবিতা দিয়ে সমর্থন জানাবো তোমাকে,
হে প্রেমিক, হে উদ্বাস্তু, তোমাদের দুঃখে আমি গলে হবো নদী!
হে দিন, হে কালরাত্রি,
না হয় আগলাবো আমি তোমাদের দুর্দিনের গদি।
তোমরা নির্বোধ হাতে স্মৃতিমুখ খুঁজে খুঁজে পড়ে যাবে যখন অসুখে,
তোমাদের দুঃখে আমি মরে যেতে রাজি আছি—কারো দুঃখে মরা যায় যদি।
কী আশ্চর্য! সেই ছেলে আমার দর্শন শুনে তবু
অর্ধেক বিস্কুট ফেলে রেস্টোর‍্যান্ট থেকে
চলে গেল৷ সেই মেয়ে সিনেমার বিজ্ঞাপনের ভিড়ে
ডুবে গেল, তারপর কী যেন বললো সঙ্গিনীকে?
মনে হলো হেমিংওয়ে মম নিয়ে ওদের বিবাদ
আজন্ম চলেছে যেন, বন্ধুত্বটা কোনোমতে আছে তবু টিকে?
হঠাৎ পড়লো চোখে কাগজের এডিটোরিয়াল,
আমেরিকা ভালো, চীন ভালো...
ট্রুম্যান পাঠাবে অন্ন আমাদের কাল:
হৃদয় জুড়ালো।
হে যুবক, হে যুবতী, পৃথিবীতে তোমাদের কতটুকু দাম?
কান্নাকে শরীরে নিয়ে কার ঘরে কয় ফোঁটা দিয়ে গেলে আলো?

Website Developed by:

DR. BISHWAJIT BHATTACHARJEE
Assistant Prof. & Former Head
Dept. of Bengali, Karimganj College
Karimganj, Assam, India, 788710

+917002548380

bishwa941984@gmail.com
Important Links:
Back to content