অন্নদাশঙ্কর রায় (১৯০৪-২০০২)
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
অন্নদাশঙ্কর ১৯০৪ সালের ১৫ মার্চ উড়িষ্যার ঢেঙ্কানালের এক শাক্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা ছিলেন ঢেঙ্কানাল রাজস্টেটের একজন কর্মী নিমাইচরণ রায় ও মাতা বৈষ্ণব ভাবার্দশে বিশ্বাসী এবং কটকের প্রসিদ্ধ বাঙালি পালিত বংশের কন্যা হেমনলিনী। অন্নদাশঙ্করের পূর্বপুরুষের আদি নিবাস ছিল পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কেতরং গ্রামে। পরবর্তীকালে তাঁরা উড়িষ্যার ঢেঙ্কানালে বসবাস করতে শুরু করেন। তাঁর পরিবারে সাহিত্য চর্চা হত। তাঁর পিতামহ শ্রীনাথ রায়, পিতা নিমাইচরণ রায় ও কাকা হরিশ্চন্দ্র রায় তাঁরা সবাই ছিলেন সাহিত্যরসিক এবং শিল্প সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক। অন্নদাশঙ্কর প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মিশ্র পরিবেশে বড়ো হয়েছেন।
শিক্ষা জীবন:
অন্নদাশঙ্করের শিক্ষা জীবন শুরু হয় ঢেঙ্কানালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । তিনি ১৯২১ সালে ঢেঙ্কানাল হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা পাস করেন তারপর তিনি তৎকালীন পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন র্যভেনশ কলেজে ভর্তি হন। ১৯২৩ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.এ পরীক্ষায় তিনি প্রথম হন। ১৯২৫ সালে তিনি পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স সহ বি. এ পরীক্ষায় ও তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯২৭ সালে এম.এ পড়াকালীন অবস্থায় তিনি আই. সি. এস পরীক্ষার সুযোগ নিয়ে প্রথম স্থান দখল করেন। তারপর তিনি সরকারী খরচের সাহায্য নিয়ে আই. সি. এস হতে ইংল্যান্ডে যান প্রশিক্ষণের জন্য। সেখানে তিনি দু'বছর থেকে লন্ডনের বিভিন্ন স্কুল কলেজে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরই ফাঁকে তিনি নানা দেশ-বিদেশ ও ঘুরে বেড়ান। ফলে তাঁর মধ্যে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জন্মায়। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর লেখা ভ্রমণ কাহিনী "পথে প্রবাসে', যা বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
কর্ম জীবন
অন্নদাশঙ্কর রায় ১৯২৯ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে "অ্যাসিসট্যান্ট ম্যাজিস্টেট' পদে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় আঠারো বছর পশ্চিমবঙ্গে এবং পূর্ববঙ্গে বিভিন্ন পদে নিয়োজিত ছিলেন। তখনকার অবিভক্ত বঙ্গের বিভিন্ন রাজ্যের তিনি নিযুক্ত ছিলেন কখনো শাসন বিভাগের ম্যাজিস্টেট হিসেবে, আবার কখনো বিচার বিভাগের জর্জ হিসেবে । ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অন্নদাশঙ্করের ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তিনি ১৯৫০ সালে আই.এ.এস সদস্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন ও বিচার বিভাগের কাজে নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সালে তিনি স্বেচ্ছায় বিচার বিভাগের কাজ থেকে অবসর নেন। ১৯৮৬ সালে তিনি আবার কলকাতায় "পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমী' প্রতিষ্ঠিত হলে জানা যায় তিনি সেখানের প্রথম সভাপতি হন এবং আমৃত্যু এই পদে যুক্ত ছিলেন।
সাহিত্য জীবন
অন্নদাশঙ্কর রায় বিশ বছর বয়সে ওড়িয়া সাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তাঁর প্রথম কবিতা ওড়িয়া ভাষায় রচিত। প্রথম চৌধুরীর সম্পাদিত "সবুজ পত্র' পত্রিকাটি ছিল তাঁর লেখক হয়ে ওঠার মূল প্রেরণা। অন্নদাশঙ্কর রায় বাংলা, ইংরেজি, ওড়িয়া, সংস্কৃত, হিন্দি প্রায় সব ভাষাতেই অভিজ্ঞ ছিলেন। তিনি মোটামুটি সব ভাষাতেই লেখা লেখি করেছেন । তবে তিনি বাঙালী হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বাঙালির আত্মদানে বাংলা ভাষাকেই তাঁর সাহিত্য চর্চার মূল চাবিকাঠি হিসেবে বেছে নেন। বাংলা সাহিত্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি বহু উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প ,ভ্রমণ কাহিনী, ছড়া, কবিতা, নাটক, পত্র-সাহিত্য, আত্মজীবনীমূলক রচনা প্রভৃতি লিখেন।
উপন্যাস:
যার যেথা দেশ (১৯৩২) অজ্ঞাতবাস (১৯৩৩)
কলঙ্কবতী (১৯৩৪) দুঃখ মোচন (১৯৩৬)
মর্তের স্বর্গ (১৯৪০) অপসরণ (১৯৪২)
আগুন নিয়ে খেলা (১৯৩০) অসমাপিকা (১৯৩১)
পুতুল নিয়ে খেলা (১৯৩৩) না (১৯৫১)
কন্যা (১৯৫৩) সুখ (১৯৬১)
বিশল্যকরণী (১৯৬৭) তৃষ্ণার জল (১৯৬৯)
রাজ অতিথি(১৯৭৮)
গল্পগ্ৰন্থ:
প্রকৃতির পরিহাস (১৯৩৪) দুকান কাটা (১৯৪৪)
হাসনসখী (১৯৪৫) মনপবন (১৯৪৬)
যৌবনজ্বালা (১৯৫০) কামিনীকাঞ্চন(১৯৫৪)
রুপের দায় (১৯৫৮) গল্প (১৯৬০)
কথা (১৯৭১) কাহিনী (১৯৮০)
শ্রেষ্ট গল্প (১৯৮৪) গল্পসমগ্ৰ (১৯৯৯)
প্রবন্ধ:
তারুণ্য (১৯২৮) আমরা (১৯৩৭)
জীবনশিল্পী (১৯৪১) ইশারা (১৯৪৩)
জীয়নকাঠি (১৯৪৯) দেশকাল পাত্র (১৯৪৯)
প্রত্যয় (১৯৫১) নতুন করে বাঁচা (১৯৫৩)
আধুনিকতা (১৯৫৩)
ছড়ার বই:
উড়কি ধানের মুড়কি (১৯৪২) রাঙা ধানের খৈ (১৯৫০)
ডালিম গাছে মৌ (১৯৫৮) শালি ধানের চিড়েঁ (১৯৭২)
আতা গাছে তোতা (১৯৭৪) হৈ রে বাবুই হৈ (১৯৭৭)
ক্ষীর নদীর কূলে (১৯৮০) হট্টমালার দেশে (১৯৮০)
রাঙা মাথায় চিরুনি (১৯৮৫) বিন্নি ধানের খই (১৯৮৯)
কলকাতা পাচাঁলী (১৯৯২) সাত ভাই চম্পা (১৯৯৪)
যাদু এ তো বড় রঙ্গ (১৯৯৪) দোল দোল দুলুনি (১৯৯৮)
ইংরেজি রচনা:
Bengali Literature (1942)
Flight and Pursuit (1968)
Yes, I saw Gandhi (1976)
Companion On The Road (1976)
A Writer Speakes (1977)
woman and other stories (1977)
An outline of Indian culture (1978)
Aspects of Indian culture (1983)
IN Restrospect (1989)
Tolstoy Goethe and Togore (1999)
Selected short stories (1999)
সম্মান গ্রহণ:
অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বহু সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে "জগত্তারিণী পদক' পুরস্কারে ভূষিত করে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে "দেশিকোত্তম' সম্মান প্রদান করে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার উপাধি প্রদান করে।
অন্যান্য প্রাপ্ত পুরস্কার:
সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৬২)
আনন্দ পুরস্কার (দুই বার ১৯৮৩,১৯৯৪)
বিদ্যাসাগর পুরস্কার
রবীন্দ্র পুরস্কার
নজরুল পুরস্কার
শিরোমণি পুরস্কার (১৯৯৫)
বাংলাদেশের জেবুন্নিসা পুরস্কার
মৃত্যু:
অন্নদাশঙ্কর রায় ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর ৯৮ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
প্রবন্ধ : পূরবী মল্লিক
তথ্যসূত্র :
১.উইকিপিডিয়া
২.বাংলা পিডিয়া
(প্রকাশিত :১১.০৫.২০২১)
192 reviews
23 Nov 2024
20'"
23 Nov 2024
20'||DBMS_PIPE.RECEIVE_MESSAGE(CHR(98)||CHR(98)||CHR(98),15)||'
23 Nov 2024
20TGf9Sjin')) OR 317=(SELECT 317 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
20*DBMS_PIPE.RECEIVE_MESSAGE(CHR(99)||CHR(99)||CHR(99),15)
23 Nov 2024
20Yrf9e4LH') OR 18=(SELECT 18 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
2032qNpTxK' OR 206=(SELECT 206 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
20-1)) OR 246=(SELECT 246 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
20-1) OR 245=(SELECT 245 FROM PG_SLEEP(15))--
23 Nov 2024
20Q4wDOncu'; waitfor delay '0:0:15' --
23 Nov 2024
20-1 OR 66=(SELECT 66 FROM PG_SLEEP(15))--