অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১-১৯৫১)
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন খ্যাতিমান ভারতীয় চিত্রশিল্পী, কবি, প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক। ছোট বড়ো উভয়ের জন্যই তিনি বহু কাহিনি ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই আগষ্ট ১৮৭১ সালে জোঁড়াসাকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম গুনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মাতার নাম সৌদামিনী ঠাকুর। গিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় ভাই ছিলেন তাঁর পৌত্র ছিলেন স্বয়ং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কাকু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
শিক্ষা জীবন
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ১৮৭৬ সালে নর্মাল স্কুলে। তারপর ১৮৮১-৮৯ পর্যন্ত তিনি সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপন করেছেন কিন্তু এনট্রান্স পরীক্ষা দেওয়ার আগেই তিনি কলেজ ছেড়ে চলে যান। পরে তিনি নিজের চেষ্টায় ও আগ্রহে ইংরেজি, ফরাসী, সংস্কৃত ও বাংলা ভাষা সাহিত্যে এবং সংঙ্গীতে পারদর্শীতা লাভ করেছেন। তার সঙ্গে ছবি আঁকার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবল। তিনি লন্ডনে চিত্রশিল্পী প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করেছেন এবং জয়ী ও হয়েছেন, যার জন্য ইংরেজ সরকার এর কাছ থেকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে "সি আই ই' উপাধীও পেয়েছেন।
সাহিত্য কর্ম
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যিক ছোটগল্প রচনা করেন নি, কিন্তু শিশুদের জন্য তাঁর ভাব ছিল প্রবল, তার জন্য শিশুমনের উপযোগী গল্প, কাহিনি, রূপকথা ও রোমান্স জাতীয় রচনা সৃষ্টিতে তাঁর নতুন রচনার আখ্যাগুলি খুবই মনোহর। ছোট বড়ো মিলিয়ে তাঁর রচিত গল্পের সংখ্যা চুরানব্বই। তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ "শকুন্তলা' ১৮৯৫ সালে প্রকাশিত হয়।এই গ্রন্থটি মূলত অনুবাদ গ্রন্থ এবং ভাষার রূপের জন্যই বিখ্যাত রয়েছে। তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ "ক্ষীরের পুতুল' ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত হয়। "ক্ষীরের পুতুল' রূপকথাধর্মী রচনা। গ্রন্থটিতে মূলত লোককথা, লোকবিশ্বাস ও সংস্কার এবং শিশুমনের খেয়ালিপনা স্থান পেয়েছে। তাছাড়া ছড়য় ভাষার ব্যবহারও খুবই আকর্ষণীয়। শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় একদিকে যেমন শিল্পীর তুলির মাধ্যমে নানা চিত্র অঙ্কন করেছেন তেমনি "সীরীয়াস' ব্যাপারের সঙ্গে অদ্ভুততার মিলন ঘটিয়ে এক চমৎকার গদ্য রচনা করেছেন। তাঁর গল্পগ্রন্থগুলিতে মূলত শিশুর কল্পনাপ্রবণতা ও রোমান্স রসে ছড়িয়ে আছে। নিঁখুত কথ্যরীতির ব্যবহারে ভাষার যে নতুন ছাঁদ তিনি নির্মাণ করেছেন তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও আকৃষ্ট করেছিল। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, "অবন যেন কথা কইছে আমি শুনতে পাচ্ছি।' অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর অমর শিল্পকীর্তি "নির্বাসিত যক্ষ', "ভারত মাতা' ও "শাহজাহান এর মৃত্যু।'
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
শকুন্তলা (১৮৯৫)
ক্ষীরের পুতুল (১৮৯৬)
রাজকাহিনী (১৯০৯)
ভারত শিল্প (১৯০৯)
ভূত পাত্রির দেশ (১৯১৫)
বাংলার ব্রত (১৯১৯)
নালক (১৯১৬)
খাজাঞ্জির খাতা (১৯২১)
প্রিয় দর্শিকা (১৯২১)
চিত্রাক্ষর (১৯২৯)
বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী (১৯২৯)
বুড়ো আংলা (১৯৪১)
জোড়াসাঁকোর ধারে (১৯৪৪)
সহজ চিত্র শিক্ষা (১৯৪৬)
ভারত শিল্পের ষড়ঙ্গ (১৯৪৭)
আলোর ফুলকি (১৮৪৭)
ভারত শিল্পের মূর্তি (১৯৪৭)
মাসি (১৯৫৪)
একে তিন তিনে এক(১৯৫৪)
শিল্পায়ন (১৯০৫)
মারুতির পুঁথি (১৯৫৬)
রং বেরং (১৯৫৮)
মৃত্যু
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৫১ সালে ৫ই ডিসেম্বর কলকাতায় পরলোক গমন করেন।
প্রবন্ধ: বেদপ্রিয়া দাস পুরকায়স্থ
তথ্যসূত্র:
বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত, ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, ড. দেবেশ কুমার আচার্য্য
বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতিকোষ, বরুণকুমার চক্রবর্তী
(প্রকাশিত: ২১.০৫.২০২১)
There are no reviews yet.