E-Learning Info
Go to content
E-Learning Info has been created considering the educational needs of students. It contains various subjects such as curriculum, past question papers, and Bengali literature. Within it lies the opportunity for students to publish their own writings for the development of their talents. The website is entirely built through personal initiatives and has no commercial purpose. Free text storage is provided on the website for the educational development of students. You can also join this website and help us advance the academic discussion. Every piece of information on this website is under a Creative Commons International License.
E-Learning Bengali
বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ
প্রাচীন ও মধ্য যুগ
বিজয় গুপ্তের মনসামঙ্গল


আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ক্রমবিকাশ
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সূচনা পর্ব
সাহিত্যিকদের অবদান



বরাক-চর্চা: সাহিত্যচর্চায় গর্বিত-নিজস্বতা, অমলেন্দু ভট্টাচার্য
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত
বরাক নদী-বিধৌত দক্ষিণ অসমের সমতল তিনটি জেলা, বরাক উপত্যকা নামে পরিচিত। রাজনৈতিক কাঁটাছেড়ায় অসমের অন্তর্ভুক্ত হলেও আবহমান কাল থেকে গাঙ্গেয় সমতলের এই বর্ধিষ্ণু ভূখণ্ডের মূল সাংস্কৃতিক ধারাটি বঙ্গীয়। তিন দিকে দুর্গম পাহাড় ঘেরা বরাক উপত্যকা একটি অবরুদ্ধ জনপদ। মানুষের মনোজীবনে ভূগোলের প্রভাব অনস্বীকার্য। সম্ভবত এই কারণেই বরাকবাসী নিজস্ব আচার-সংস্কার নিয়ে গর্ববোধ করেন। ঐতিহ্যকে মহিমান্বিত করার এই প্রবণতা বরাকের সাহিত্যেও পরিলক্ষিত হয়।
বরাক উপত্যকায় মনসামঙ্গল রচয়িতা একজন কবির নাম রামচন্দ্র চৌধুরী। তাঁর কাব্যের চাঁদ সওদাগর বাণিজ্যের জন্য ‘সিদল’ (শুকনো মাছ) সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছেন এবং সিংহলের রাজার কাছে ‘আশ্চর্য বস্তু’ তথা ‘সিদলপুড়া’ তৈরির প্রণালীও বর্ণনা করেছেন—‘অগ্নিমধ্যে সিদলকে কিঞ্চিত জ্বালাইয়া/কাঁচামরিচ আদা লবণ মিশাইয়া/মিশ্রিত করিয়া যদি করহ ভক্ষণ/তবে সিদলের মর্ম জানিবা আপন।’
আধুনিক পর্বের উন্মেষ লগ্নের কবি রামকুমার নন্দীমজুমদারের উল্লেখযোগ্য দু’টি কাব্য ‘বীরাঙ্গনা পত্রোত্তর’ ও ‘উষোদ্বাহ কাব্য’। মধুসূদনের ‘বীরাঙ্গনা কাব্যে’র প্রত্যুত্তরবাচী রচনা ‘বীরাঙ্গনা পত্রোত্তর’ কাব্যে উপভাষার সার্থক প্রয়োগ কাব্যটিকে আঞ্চলিক পরিচয়ে চিহ্নিত করেছে। ‘....কেকয়ীর প্রতি দশরথ’-এ ক্রুদ্ধ দশরথ বারবার বলেছেন, ‘কঃ তবে, কঃ তবে এখনি’। এ-ও তো সেই আঞ্চলিক ভাষা! তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের সিলেটি ক্রিয়ারূপ। ভাষাবিদ ও সমালোচক অধ্যাপক ভূদেব চৌধুরী দেখিয়েছেন: বরাক উপত্যকার ভাষা আজও বলে, ‘তুমি কও’ (<কহ), আর ‘তুই ক’ (<কও <কহ)। দশরথের ক্রোধ ও ঝাঁজ প্রকাশের উপভাষার এহেন প্রয়োগ কবির স্বকীয়তার পরিচয়। উষোদ্বাহ কাব্যে দৈত্যরাজ বাণের কন্যা উষার বিবাহে অনুসৃত হয়েছে স্থানীয় স্ত্রী-আচার। রয়েছে জলভরা আচারের মনোজ্ঞ বর্ণনা।
এই ধারাবাহিকতার সূত্রে রবীন্দ্রোত্তর ভাবধারায় দীক্ষিত কবি শক্তিপদ ব্রহ্মচারী সগর্বে ঘোষণা করেন, ‘বাংলা আমার আই ভাষা গো, বিশ্ব আমার ঠাঁই/প্রফুল্ল ও ভৃগু আমার খুল্লতাত ভাই।’ (উদ্বাস্তুর ডায়েরি)
নিঃসন্দেহে ভাষা-আন্দোলন বরাকের সৃষ্টিশীল ভাবনার প্রেরণার উত্স। উপত্যকাবাসীর মনন-চিন্তনে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে শহিদের রক্তরঞ্জিত উনিশে মে। এই সংলগ্নতার স্বরূপ বিধৃত হয়েছে জলালউদ্দিন লস্করের কবিতায়, ‘উনিশ এখন মাঠে রাখালের/ মন মোহনীয়া বাঁশী।/উনিশ এখন শিশুর মুখের/ প্রাণ জাগানো হাসি।/উনিশ আমার শিরায় শিরায়/রক্ত কোলাহল/বর্ণমালার বিজয়ী ধ্বজা/উনিশ এনে দিলে।’ (উনিশ আমার উনিশ)
উপন্যাসের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য পেয়েছে ঐতিহ্যপ্রীতি। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হারানচন্দ্র রাহার ‘রণচণ্ডী’ উপন্যাসের পটভূমি হেড়ম্ব রাজ্য। হেড়ম্ব রাজ্যের কুলদেবী রণচণ্ডীর উদ্ভব সম্পর্কীত একটি ভিন্ন কাহিনি বর্ণিত হয়েছে এই উপন্যাসে। মোগলদের সঙ্গে সংগ্রামে রাজা উপেন্দ্রনারায়ণ নিহত হলে যুবরাজ শত্রুদমন কী ভাবে হৃতরাজ্য উদ্ধার করলেন সেই কাহিনী। আর এর সমান্তরালে বর্ণিত হয়েছে নায়িকা রুণুর সঙ্গে যুবরাজের প্রণয়কাহিনি। বরাক উপত্যকার দুটি সুপ্রাচীন তীর্থস্থান সিদ্ধেশ্বর ও ভুবন, দুর্গম পার্বত্য পথ, বনবাসী কুকিদের সামাজিক রীতিনীতির বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ রয়েছে এই উপন্যাসে। আঞ্চলিক ইতিহাস নির্ভর রচনা ‘রণচণ্ডী’র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অধ্যাপক বিজিতকুমার দত্ত বলেছেন, ‘রণচণ্ডীর বিষয়বস্তু সারালো। বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাসে এ জাতীয় ঘটনা বিশেষ পাওয়া যায় না। পার্বত্য অধিবাসীদের নিয়ে কাহিনি রচনার মধ্যে অভিনবত্ব আছে নিশ্চয়ই।’ ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত লাবণ্যকুমার চক্রবর্তীর ‘মহারাণী ইন্দুপ্রভা’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মণিপুর রাজকন্যা হেড়ম্বমহিষী ইন্দুপ্রভা। উপন্যাসের সূচনাস্থল প্রাচীরবেষ্টিত রাজধানী-নগরী খাসপুর। বরাক উপত্যকার প্রথম মৌলিক সামাজিক উপন্যাস ‘নারীশক্তি বা অশ্রুমালিনী’র (১৯২৪) পটভূমিও বরাক উপত্যকা। বিভিন্ন ঘটনাসূত্রে বর্ণিত হয়েছে সিদ্ধেশ্বর তীর্থের ঐতিহাসিক লক্ষাহুতি যজ্ঞ, বদরপুর-লামডিং রেলপথের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ও সুড়ঙ্গপথের কথা। পরবর্তী ঔপন্যাসিকরা লিপিবদ্ধ করছেন প্রান্তিক মানুষের হাসি-কান্নার ছবি। প্রকাশিত হয়েছে গণেশ দে-র ‘কলংমার কূলে’ (১৯৮৯), রণবীর পুরকায়স্থের ‘সুরমা গাঙের পানি’ (২০১২), ইমাদউদ্দিন বুলবুলের ‘সুরমা নদীর চোখে জল’ (২০১৩) ইত্যাদি। কলংমা, সুরমা এমন নদীর নামেই ব্যঞ্জিত হয় ভূগোলের পরিচিতি।
বরাক উপত্যকার প্রাবন্ধিক গোষ্ঠী বিশ শতকের সূচনাকালে বিশেষ একটি ঘটনাসূত্রে উপলব্ধি করেছিলেন জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনেই আঞ্চলিক ঐতিহ্য চর্চা করা দরকার। লোকসংস্কৃতিবিদ উইলিয়াম ক্রকের গবেষণার প্রয়োজনে ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে শ্রীহট্ট-কাছাড় বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন পদ্মনাথ ভট্টাচার্য। এই অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘এই ব্যাপারে স্বদেশের তথ্য সংগ্রহ বিষয়ে আমার ‘হাতেখড়ি’ হইয়াছিল, পরিণাম শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত।’’ অচ্যুতচরণ চৌধুরীর ‘শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত’ (১৯১০) প্রকাশের পর থেকে সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত রচিত ইতিহাস, সমাজ, সংস্কৃতি, জনবিন্যাস, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্ম, ভাষাতত্ত্ব, অভিধানবিদ্যা বিষয়ক অজস্র প্রবন্ধ বরাকের সাহিত্যভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।
বরাক উপত্যকার পটভূমিতে গল্প রচনা শুরু হয়েছে পরবর্তীকালে—বিশেষত গত শতকের সাতের দশক থেকে। প্রথম ছোটগল্প সংকলন ‘নীলগোলাপ’ (১৯৬৯)। সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের সংখ্যা তিরিশটিরও বেশি। এই উপত্যকার প্রধান শিল্প, চা। চা-বাগানের শিল্পনির্ভর জীবনের মূল্যবোধ কৃষিভিত্তিক সমাজের থেকে ভিন্ন। শোষণ, বঞ্চনা, অশিক্ষা, কুসংস্কার, দারিদ্রজর্জর চা-বাগান শ্রমিকদের জীবনের পটভূমিতে লেখা হয়েছে বেশকিছু উত্কৃষ্ট গল্প।
দীনবন্ধু মিত্র সরকারি কাজে বরাক উপত্যকায় এসেছিলেন ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর শেষ নাটক ‘কমলে কামিনী’ (১৮৭৩) কাছাড়ের ইতিহাস অবলম্বনে রচিত। এ বিষয়ে এর আগে কোনও নাটক রচিত হয়নি। ‘কমলে কামিনী’ বরাক উপত্যকার মানুষকে উদ্দীপিত করেছিল সন্দেহ নেই। নাট্যসাহিত্যের সঙ্গে মঞ্চের অচ্ছেদ্য যোগ। বরাক উপত্যকার প্রথম নাট্য সংস্থা ‘রিডিং অ্যান্ড ড্রামাটিক ইনস্টিটিউট’ (১৯১১)। প্রথম পর্বে প্রকাশিত হয়েছে শেক্সপিয়র, মেটারলিঙ্কের নাটকের অনুবাদ। প্রথম মৌলিক নাটক ‘মেঘমল্লার’ (১৯৩৫), মেয়েদের নাট্যাভিনয়ের প্রয়োজনে লেখা। নাট্যকার ভূপেন্দ্রকুমার শ্যাম। নাট্যসাহিত্যের পরিপুষ্টি সাধনে শিলচর বেতার কেন্দ্রের (১৯৭২) পৃষ্ঠপোষকতা অনস্বীকার্য। এই অঞ্চলের নিজস্ব জীবনবোধ নিয়ে লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটক হল চিত্রভানু ভৌমিকের ‘আইজও আন্ধাইর’, শেখর দেবরায়ের ‘মনসাকথা’, তীর্থঙ্কর চন্দের ‘কাঠের তরোয়াল’ ইত্যাদি।
বরাকের সাহিত্যধারায় মেয়েদের লেখালেখির কথা আলাদাভাবে বলা দরকার। কারণ দীর্ঘসময় পর্যন্ত অন্তঃপুরবাসিনীদের ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। মহাত্মা গাঁধী শিলচরে আসেন ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে। গাঁধীদর্শন উপলক্ষে মেয়েরা প্রথম প্রকাশ্যে চলাফেরার অনুমতি পান। মেয়েদের উদ্যোগে প্রকাশিত প্রথম পত্রিকাটির নাম ‘মাসিক বিজয়িনী’ (১৯৪০)। সম্পাদক জ্যোত্স্না চন্দ। ‘বিজয়িনী’র অধিকাংশ লেখিকা নাম প্রকাশ করতেন না। এই কুণ্ঠার কারণ সহজে অনুমেয়। সুপ্রভা দত্ত, অনুরূপা বিশ্বাস প্রমুখের আত্মজীবনীমূলক রচনায় যেমন আছে প্রতিবাদী উচ্চারণ, তেমনি আছে ‘খাঁচার পাখি’র অসহায় ছটফটানি।
বহুভাষিক এই উপত্যকায় ডিমাসা, মণিপুরি, হিন্দি, মার, বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষায়ও বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। অনুবাদের কাজও চলছে। বিভিন্ন ভাষার কবি-লেখকরা প্রায়শই একত্রিত হয়ে নিজেদের সাহিত্য পাঠ করছেন। ঘনীভূত হচ্ছে সমন্বয়ী চেতনা। বরাক নদীর জলস্রোতের মত বরাকের সাহিত্যও নিয়ত প্রবহমান।
করিমগঞ্জ কলেজের জন্মলগ্নের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
আসামের বরাক উপত্যকায় স্বাধীনতা পূর্ববর্তী যে দুটি মহাবিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল তার মধ্যে করিমগঞ্জ মহাবিদ্যালয় অন্যতম। শিলচরের গুরুচরণ কলেজ (১৯৩৫) এর পর ১৯৪৬ সালে করিমগঞ্জে করিমগঞ্জ মহাবিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তার পরবর্তীকালে এই উপত্যকায় অন্যান্য মহাবিদ্যালয়গুলি ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে- শ্রীকিষাণ সারদা মহাবিদ্যালয়, হাইলাকান্দি (১৯৫০), কাছাড় কলেজ, শিলচর (১৯৬০), রবীন্দ্র সদন মহিলা মহাবিদ্যা্লয়, করিমগঞ্জ (১৯৬২), মহিলা মহাবিদ্যালয়, শিলচর (১৯৬৩) রাধামাধব মহাবিদ্যালয়, শিলচর (১৯৭১)। বর্তমানে এই উপত্যকায় অসংখ্য মহাবিদ্যালয় রয়েছে।
১৯৪৬ সালে দক্ষিণ আসামে করিমগঞ্জ মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে একটি ইতিহাস। যখন এই মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তখন করিমগঞ্জ অবিভক্ত ভারতের সিলেট অঞ্চলের সাবডিভিসন ছিল। আজকের বরাক উপত্যকার নাম তখন সুরমা উপত্যকা। সুরমা উপত্যকার মূল সদর তখন সিলেট ছিল। করিমগঞ্জ কলেজ স্থাপনের আগে এই উপত্যকায় চারটি মহাবিদ্যালয় ছিল। তার মধ্যে তিনটিই সিলেট সদরে- মুরারীচাঁদ মহাবিদ্যালয় (১৮৯২), মহিলা বিদ্যালয় (১৯৩৯), মদনমোহন মহাবিদ্যালয় (১৯৪০) এবং শিলচরে ছিল গুরুচরণ মহাবিদ্যালয় (১৯৩৫)।
সুদূর মধ্যযুগ থেকে করিমগঞ্জ ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল। করিমগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া কুশিয়ারা নদীই তখন ব্যবসা বাণিজ্যের মূল মাধ্যম ছিল। ১৭৬৫ সালে এই অঞ্চল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অন্তর্ভূক্ত হয়। উল্লেখ্য ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থলকে আগে ‘গঞ্জ’ বলা হত। তা থেকেই সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, জকিগঞ্জ, করিমগঞ্জ প্রভৃতি নামের উৎপত্তি। ১৮৯০ সালে করিমগঞ্জ রেলের সাথে যুক্ত হয়। গুয়াহাটির সাথে করিমগঞ্জ যুক্ত হয় বদরপুর ও লামডিং এর মধ্য দিয়ে। ধীরে ধীরে রেল এবং জলপথের সাথে যুক্ত হলে এই অঞ্চল ক্রমশ উন্নতির দিকে এগোতে থাকে। সে সময় কলকাতা থেকে জলপথে খুব সহজেই পণ্য এই অঞ্চলে আনা সম্ভবপর ছিল। বর্তমানে জলপথ বন্ধ হয়ে গেলে জাহাজ বন্দরগুলো এখনও তাদের ঐতিহ্য নিয়ে শহরের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারের ফলে ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই মানুষের মধ্যে শিক্ষা-দীক্ষার ক্রমশ প্রসার ঘটতে শুরু করেছিল। চল্লিশের দশকের গোড়া থেকেই আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি দ্রুত গতিতে বদলে যেতে শুরু করলে এই অঞ্চলে একটি কলেজ স্থাপন খুবই গুরুত্বপুর্ণ হয়ে পরে। এই কলেজ স্থাপনের পেছনে অনেক মহৎ ব্যক্তির অবদান রয়েছে। খুব সম্ভবত ১৯৪৫ সালে প্রথম কিছু বরেণ্য ব্যক্তি এগিয়ে আসেন এই অঞ্চলে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য। সে সময় মহম্মদ ইয়াহিয়া খানকে প্রধান করে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠিত হয়। ইয়াহিয়া খান এ অঞ্চলের তৎকালীন সাবডিভিসন অফিসার ছিলেন। অগ্রণী হিসেবে এগিয়ে আসেন রবীন্দ্রনাথ আদিত্য যিনি পেশায় উকিল ছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী, শিক্ষক এবং সমাজ সংস্কারক। রবীন্দ্রনাথ আদিত্য ছিলেন এই কমিটির সম্পাদক। করিমগঞ্জ কলেজ ইয়াহিয়া খানের স্বপ্ন ছিল, যে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সেদিন সর্বস্তরের মানুষ এগিয়ে এসেছিলেন। কলেজ কমিটির প্রচেষ্টায় ৩১শে মার্চ ১৯৪৬ এর রেকর্ড অনুযায়ী ৬৬,৬৫৯ টাকা সংগ্রহ হয়েছিল। এই টাকা সেদিন বিভিন্ন চা বাগানের মালিক, বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থা এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে দান করেছিলেন। ইয়াহিয়া খান তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক এস. সি. দাসের কাছে সরকারি চিঠি পাঠিয়ে বলেন, এই কলেজ স্থাপনের জন্য তার ক্ষমতার মধ্যে থাকা সবধরনের সাহায্য সহযোগিতা করবেন। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ২০ আগস্ট ১৯৪৭ সালে খান সাহেব ভারত ছেড়ে পাকিস্তা্নে চলে যান। শুরু থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ আদিত্য এই কলেজের সেক্রেটারির ভূমিকা পালন করেন।
করিমগঞ্জ কলেজের আরেকজন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব হলেন তৎকালীন ভারতের একজন অন্যতম শিক্ষা সংস্কারক, সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক প্রমেশচন্দ্র ভট্টাচার্য। তিনি ১৯৪৭ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। এই তিনজনের প্রচেষ্টায় খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই কলেজ তার নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলে। ইয়াহিয়া খান চলে যাওয়ার পর এই দুইজন শক্ত হাতে হাল ধরেন। তখন অনেক কাজ ছিল যেমন- কলেজের জন্য জমি নির্ধারণ, কলেজের নিজস্ব ঘর তৈরি করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ প্রভৃতি নানা বিষয়। তারা নেতৃত্ব দিলেও তাদের সঙ্গে সেদিন ছিলেন রাজস্থানী ব্যবসায়ী তুলারাম ভুরা, উকিল বিনোদ বিহারী দাস, মুন্সী ফুরকান আলী, খান বাহাদুর আব্দুল মজিদ চৌধুরী, সনৎ কুমার ভট্টাচার্য, রসরাজ দাস, রণেন্দ্রমোহন দাস, রায়বাহাদুর অনুকূল চন্দ্র দাস, খানসাহেব আব্দুস সালাম চৌধুরী, খান বাহাদুর মহম্মদ আলী, হরদয়াল দাস, ঈশ্বরচন্দ্র রায়, ললিত মোহন শর্মা এবং আরো অনেক ব্যক্তিত্ব।
শুরুতে কলা, বিজ্ঞান এবং বাণিজ্য বিভাগের সাথে সাথে কারিগরি বিদ্যাকেও অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। করিমগঞ্জ কলেজের আসল নাম ছিল ‘করিমগঞ্জ কলেজ অব্ আর্টস্, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি’। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী টেকনোলজিকে অন্তর্ভূক্ত করা সম্ভব হল না। তাই প্রাথমিক অবস্থায় টেকনোলজিকে বাদ দিয়েই কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়, কিন্তু কমিটির সদস্যরা নাছোড়বান্দা ছিলেন। তারা আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চিঠি লেখেন টেকনোলজিকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য। ইয়াহিয়া খান তৎকালীন আসামের মুখ্যমন্ত্রী গোপিনাথ বরদলৈর কাছেও চিঠি লিখেছিলেন, যা তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনুমোদনের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পরে মুখ্যমন্ত্রী করিমগঞ্জ কলেজ পরিদর্শনে এলে এ কথার উল্লেখ করেন এবং কলেজ কমিটিকে কারিগরি বিভাগ অন্তর্ভূক্ত করার জন্য নানা পরামর্শ প্রদান করেন। যদিও কলেজ কমিটির এই স্বপ্ন পূরণ হয়নি কারণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় ১৯০৪ সালের নিয়ম অনুযায়ী ভারত সরকারের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলিতে এ ধরনের অনুমোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। ১৯৪৬ সালের গোড়ার দিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য করিমগঞ্জ কলেজ পরিদর্শনে আসে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের আগে আসাম সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক ছিল। আসাম সরকার ১৯৪৬ সালে ২ জুলাই অনুমোদন দিলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১০ জুলাই অনুমোদন প্রদান করে। ১৯৪৬-৪৭ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয় ইংলিশ, বাংলা, সংস্কৃত, এরাবিক, পারসিয়ান, ইতিহাস, Elements of Civic & Economics এবং দর্শন। ১৯৪৬ সালের মে মাসের এক তারিখ থেকে অধ্যক্ষ প্রমেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে শহরের নগেন্দ্রনাথ টাউন হলে কলেজের পাঠদান শুরু হয়। ১৯৪৭-৪৮ শিক্ষাবর্ষে কলেজ স্টেসন রোডের আজকের ঘরে স্থানান্তরিত হয়।
(সংক্ষেপিত আলোচনা। প্রবন্ধে ব্যবহৃত তথ্যগুলি করিমগঞ্জ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ কামালুদ্দিন আহমেদের লেখা ‘Karimganj College: A Historical Profile’ থেকে সংগৃহীত)
Dr. Bishwajit Bhattacharjee, Asst. Professor, Karimganj College, Karimganj
Dated. 28.04.2020

জেন হেলেন রোলান্ডস (Miss J. H. Rowlands):
করিমগঞ্জ কলেজ এবং করিমগঞ্জ এর ইতিহাসে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব
বাঙালি না হয়ে বাঙালিদের জন্য যে মনে প্রাণে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন তিনি হলেন একজন আইরিশ মহিলা জেন হেলেন রোলান্ডস (Miss J. H. Rowlands)। তিনি ছিলেন একজন খ্রিস্টান মিশনারি। ভারতবর্ষকে ভালোবেসে সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে শিলচরের মিশনারী চার্চে এসেছিলেন ১৯৩২ সালে। আপোষহীন ও একজন ব্যক্তিত্বশালীনি মহিলা ছিলেন বলে খুব কম সময়ের মধ্যেই তিনি তখন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। ঔপনিবেশিক শাসনযন্ত্রের যাঁতাকলে আমরা একসময় যেমন পিষ্ট ছিলাম, ঠিক সে সময় এমন কিছু ব্যক্তিত্ব ভারতে এসেছিলেন যারা আমৃত্যু ভারতের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন। ধর্ম প্রচারক হলেও রোলান্ডস এই পিছিয়ে থাকা তৎকালীন সুরমা উপত্যকায় নারী শিক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি যেমন ছিলেন মানবতাবাদী তেমনি ছিলেন শিক্ষা প্রচারক। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে ভারতে চলে আসা এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি এবং বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় স্নাতকোত্তরে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। পরবর্তীকালে ১৯৩০ সালে পেরিস থেকে তিনি ডি.লিট করেন। তাঁর দিনপঞ্জি থেকে জানা যায় তিনি “Position of Bengali Literature from the earliest times up to 1850 A. D” এই বিষয়ের উপর গবেষণা করেছিলেন। ১৮৯১ সালে ওয়ালের মেনাই ব্রিজ নামে একটি ছোট শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে নিউ টাউন কান্ট্রি স্কুলে তিনি ফ্রেঞ্চ (French) ও বিউমারিস (Beaumaris) ভাষা পড়াতেন। ১৯১৫ সালে তিনি খ্রিস্টান মিশনারিতে দীক্ষিত হন। ১৯১৬ সালে তিনি সিলেটের মৌলভি বাজারে চলে আসেন এবং মেয়েদের একটি স্কুলে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হন। সে সময়ই তিনি খুব ভালো করে বাংলা শেখেন। ১৯২৭ সালে তিনি মৌলভি বাজার ছেড়ে দার্জিলিং ভাষা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। দার্জিলিং থেকে কলকাতা খুব কাছে হওয়ায় তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর পড়াশুনা করেন। সেখান থেকে শিলচরে আসার পরে তাঁর শেষ জীবন করিমগঞ্জে অতিবাহিত হয় এবং ১৯৫৫ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯৪৬ সালের ৮ মার্চ তৎকালীন সিলেট ডিভিসনের এস. ডি. ও একটি পত্রে তাঁর প্রশংসা করে সিলেটে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি করিমগঞ্জ চলে আসেন। করিমগঞ্জে এসেই বিভিন্ন জনহিতকর কাজে তিনি জড়িয়ে পরেন। করিমগঞ্জ ছিল তাঁর দ্বিতীয় বাসস্থান। আমৃত্যু করিমগঞ্জবাসীর জন্য তিনি কাজ করে গেছেন। সে সময় পর্বে নারীশিক্ষা কিংবা নারীস্বাধীনতার তেমন চল ছিল না। তিনি এগিয়ে আসেন করিমগঞ্জে স্ত্রী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে। তাঁর সবচেয়ে মহৎ কাজ করিমগঞ্জে ‘দীপ্তি নিবাস’ নামে একটি অনাথাশ্রম স্থাপন করা। যাদের কেউ ছিল না তাদের তিনি মায়ের মত সবার সেবা করতেন।
সামাজিক আন্দোলনের সাথে সাথে তিনি শিক্ষাক্ষত্রেও শক্ত হাতে হাল ধরেছিলেন। করিমগঞ্জ কলেজের ঊষালগ্নে তিনি যদি না থাকতেন তাহলে হয়তো কলেজের কর্মকাণ্ড অনেকটাই পিছিয়ে পড়ত। কারণ সে সময় যোগ্য শিক্ষকের খুবই অভাব ছিল। করিমগঞ্জ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রমেশ চন্দ্র ভট্টাচার্যকে সে সময় কলকাতা গিয়ে শিক্ষক নিয়ে আসতে হয়েছিল। বাংলার প্রতি তাঁর এতোটাই ভালোবাসা ছিল যে তিনি অনর্গল বাংলা পড়াতে পারতেন। বিদেশি হয়ে বাংলা ভাষা এবং অন্য দেশের কোনো একটি মফস্বলকে ভালোবেসে নিজের জীবন উৎসর্গ করা সত্যিই বিরল। যেহেতু তিনি মিশনারি ছিলেন তাই করিমগঞ্জ কলেজে কোনো সাম্মানিক ছাড়াই তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তিনি মূলত ইংরেজি, আর দর্শনের ক্লাস করাতেন। কিন্তু অনেক সময় বাংলার ক্লাসও নিতেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ আদিত্য স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লিখেছেন, “After we started the Karimganj College in 1946, Dr. Rowlands was requested to take some classes as honorary professor. She did not miss a single class in any week till her death on 11.02.55 except when she went out of India.” তাঁর কাছে তখন অনেক ইংরেজি বইয়ের সাথে সাথে বাংলা বইয়েরও সম্ভার ছিল। কলেজের গ্রন্থাগারের অভাব পূরণের জন্য রবীন্দ্র রচনাবলী, শেক্সপীয়র রচনাবলীসহ তখন অনেক বই দান করেছিলেন। ইউরোপীয়ান মিশনারিদের বাংলা শেখানোর জন্য তিনি “Learning Bengali Language from English”  নামে একটি বইও লিখেছিলেন। তাঁর অবদানকে সম্মান জানিয়ে করিমগঞ্জ কলেজের বর্তমান লাইব্রেরি হল Rowlands Library Hall রাখা হয়েছে। ১৯৫৮ সালে এই লাইব্রেরি হলের উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল সৈয়দ ফজল আলি। ১৯৮৬ সালে করিমগঞ্জে তাঁর স্মৃতিতে Rowlands Memorial High School প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্কুল মিজোরাম প্রেসবিটেরিয়ান চার্চ এর অধীনে। ২০০৭ সালে আসাম সরকার ছাত্রী নিবাস তৈরি করার জন্য অর্থ প্রদান করলে তৎকালীন কলেজ অধ্যক্ষ ড. রাধিকারঞ্জন চক্রবর্তীর সময়ে একটি ছাত্রীনিবাস নির্মিত হয়। যেহেতু স্ত্রীশিক্ষায় এই অঞ্চলে তাঁর অবদান অসামান্য তাই সে সময়ের হোস্টেল সুপারের দায়িত্বে থাকা ড. নির্মল কুমার সরকার ছাত্রীবাসের নাম Rowlands Memorial Girls Hostel রাখার প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে রোলান্ডস এর প্রতি সম্মান জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এই নামই গ্রহণ করেন। তিনিই সম্ভবত করিমগঞ্জে আসা শেষ ইউরোপীয়ান মিশনারী। তিনি করিমগঞ্জ কলেজ এবং করিমগঞ্জবাসীদের জন্য যা করে গেছেন তাঁর জন্য তিনি আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তথ্যসূত্র:
1. From the Corridors of Memory, 1970, Rabindranath Aditya
2. Portrait of A Visionary: J. H. Rowlands, Sujit Kumar Ghosh
3. অশোকবিজয় রাহা এবং করিমগঞ্জ কলেজের বাংলা বিদ্যাচর্চা, ড. জন্মজিৎ রায়
4. করিমগঞ্জ কলেজে আমার অধ্যয়নকালীন কিছু স্মৃতি, রমা দাস
5. https://en.wikipedia.org/wiki/Jane_Helen_Rowlands
(c) Dr. Bishwajit Bhattacharjee, Asst. Professor, Karimganj College, Karimganj
ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্স

Website Developed by:

DR. BISHWAJIT BHATTACHARJEE
Assistant Prof. & Former Head
Dept. of Bengali, Karimganj College
Karimganj, Assam, India, 788710

+917002548380

bishwa941984@gmail.com
Important Links:
Back to content